+1

মরিয়ম মান্নানের আদলে অপহরণ নাটক সাজান খতিব মিয়াজী

4 week ago
VIEWS: 191

নিজস্ব প্রতিবেদক :

গাজীপুরের টঙ্গী এলাকার টিএন্ডটি বাজার জামে মসজিদের খতিব মুফতি মোহাম্মদ মোহেববুল্লাহ মিয়াজী (৬০)-এর কথিত “অপহরণ রহস্য” অবশেষে উন্মোচিত হয়েছে। তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, এটি কোনো অপহরণ নয়, বরং মরিয়ম মান্নানের কাণ্ডের আদলে সাজানো একটি অপহরণ নাটক।

মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ তাহেরুল হক চৌহান বিষয়টির বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি জানান, মুফতি মিয়াজী নিজেই পঞ্চগড়ে গিয়ে নিজের পায়ে তালা-দেওয়া শিকল বেঁধে অপহরণের গল্প সাজান। এ বিষয়ে থানায় দায়ের করা মামলার তদন্তে কোনো অপহরণের প্রমাণ মেলেনি।

তদন্তে দেখা যায়, গত ২২ অক্টোবর সকালে মর্নিং ওয়াকে বেরিয়ে তিনি নিজেই হেঁটে টঙ্গীর নিমতলী সিএনজি পাম্প পার হয়ে পূবাইলের মাজুখান এলাকা পর্যন্ত যান। ওই সময় তার দাবি করা অ্যাম্বুলেন্স কিংবা কোনো অজ্ঞাত ব্যক্তির উপস্থিতির কোনো প্রমাণ সিসিটিভি ফুটেজে পাওয়া যায়নি। তদন্ত দল পরবর্তীতে ঢাকার শ্যামলী বাস কাউন্টার, বগুড়ার হোটেল, চালক ও সহকারীদের জবানবন্দি এবং পঞ্চগড়ের ঘটনাস্থল ঘুরে দেখার পর নিশ্চিত হয় যে, তিনি নিজের উদ্যোগেই পঞ্চগড়ে পৌঁছান।

২২ অক্টোবর রাত সাড়ে ১১টার পর তাকে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও পুলিশ লাইনস এলাকার আশপাশে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। অসুস্থ হয়ে রাস্তায় বসে পড়েন এবং প্রস্রাবের কারণে কাপড় ভিজে গেলে নিজেই কাপড় খুলে ফেলেন। পরবর্তীতে রাস্তায় পাওয়া একটি ছোট তালাযুক্ত শিকল পায়ে বেঁধে সেখানে ঘুমিয়ে পড়েন। স্থানীয়রা তাকে অচেতন অবস্থায় দেখতে পেয়ে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কমিশনার মোহাম্মদ জাহিদুল হাসান বলেন, মামলাটি এখনও তদন্তাধীন। কেন তিনি এমন কাজ করলেন, এর পেছনে কারও প্ররোচনা ছিল কিনা বা অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল কিনা, তা যাচাই করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রথমে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। কিছু ব্যক্তি ও সংগঠন আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘকে (ইসকন) দায়ী করে দাবি ছড়ায় যে, ইসকনের সদস্যরা মিয়াজীকে অপহরণ করে নির্যাতন করেছে। এর পরপরই কয়েকটি ইসলামপন্থী সংগঠন ইসকনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ, মিছিল ও মানববন্ধনের কর্মসূচি ঘোষণা করে। তারা সরকারের কাছে ইসকনের কার্যক্রম বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করার দাবি তোলে এবং ইসকন সমর্থকদের বয়কট করার আহ্বান জানায়।

এই পরিস্থিতিতে ইসকনের বিভিন্ন মন্দির ও কেন্দ্রের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। তবে মঙ্গলবার পুলিশের সংবাদ সম্মেলনে ঘটনাটি সম্পূর্ণ নাটক হিসেবে প্রমাণিত হওয়ার পর এসব আন্দোলনের গতি অনেকটাই কমে যায়।

ঘটনা প্রকাশের পর সামাজিক মাধ্যমে নেটিজেনদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। কেউ কেউ পুলিশের তদন্তে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এই নাটক দেশের ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্টের প্রচেষ্টা ছিল। আবার কেউ কেউ পুরো ঘটনাকে “দেশজুড়ে আলোচিত এক অদ্ভুত নাটক” হিসেবে আখ্যা দেন।

মোহেববুল্লাহ মিয়াজীর এই অপহরণ নাটক অনেককে মনে করিয়ে দিয়েছে ২০২২ সালের খুলনার রহিমা বেগম বা মরিয়ম মান্নান কাণ্ডের কথা। তখনও রহিমা বেগম নিখোঁজ হয়ে গেলে তাকে অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়, মামলায় কয়েকজন নিরীহ প্রতিবেশীকেও আসামি করা হয়। পরে পিবিআই তদন্তে প্রমাণিত হয়, রহিমা বেগম নিজেই আত্মগোপনে ছিলেন এবং পুরো ঘটনাটি পরিকল্পিত নাটক ছিল। এই দুই ঘটনার মধ্যকার মিল শুধু একটাই—দুজনেই অপহরণের মিথ্যা গল্প সাজিয়ে পুরো দেশকে বিভ্রান্ত করেছিলেন, আর সেই বিভ্রান্তির দায়ে নিরীহ মানুষকে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে।

to join the global Sanatani Hindu Community
Connect with Sanatani Hindus from all over the world — share, learn, and grow together.
Explore Questions, Bhajan Lyrics, Leelas, Feeds, Business Pages, Products, plus Shlokas, Events, Courses, Jobs, Marriage, Help Posts, and more.
মন্তব্য করতে Login অথবা Registration করুন