
পাঁচ আদিবাসী পরিবারকে উচ্ছেদ, বাঁশঝাড়ে আশ্রয়
নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহীর গোদাগাড়ীর বাবুডাইং গ্রামে আদালতের আদেশে কোল জনগোষ্ঠীর পাঁচ পরিবারকে গত সোমবার দুপুরে উচ্ছেদ করা হয়েছে। উচ্ছেদের পর তারা একটি বাঁশঝাড়ের নিচে রাতযাপন করেছেন। এসব পরিবারের সদস্যসংখ্যা ১৫ থেকে ২০ জন।
এক্সক্যাভেটরের আঘাতে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে পরিবারগুলোর ঘরবাড়ি। ছাউনির টিনগুলো দুমড়েমুচড়ে পড়ে আছে। বাড়ির লোকজন সরাতে পারেননি জিনিসপত্র। উচ্ছেদের পর থেকে সনাতন-রুমালী দম্পতির বাড়ির সবাই অভুক্ত। পাঁচ বছরের প্রতিবন্ধী শিশুটিও না খেয়ে আছে। জিমাইল সরেন নামে শিশু ভাতের জন্য চিৎকার শুরু করে কান্না করছে।
জিমাইলের দাদা সনাতন সরেন ও দাদি রুমালী হাসদা বলেন, ‘রান্নাঘরে ভাত-তরকারি রান্না করা ছিল। হাতে-পায়ে ধরে জিনিসপত্র সরানোর জন্য আধঘণ্টা সময় চেয়েছিলাম। বলেছিলাম, জমির দাম দিয়ে দেবো, উচ্ছেদ করিয়েন না। কিন্তু কথা শোনেনি।’
রুমালী হাসদা জানান, তাদের পাঁচটি পরিবার খাসজমি মনে করে ২৫ বছর ধরে সেখানে বাস করছিল। এর মধ্যে ওই জমি নিজেদের দাবি করে নজরুল ইসলাম আলমগীর ও তাদের আত্মীয়স্বজন মিলে কয়েকজন আদালতে মামলা করেন।
রুমালী হাসদার দাবি, আদালতের একতরফা রায়ে তাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। এ বিষয়ে কোনো নোটিশও দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘একটি জিনিসও বাহির করতে দিল না। জিনিস সরাইবার লাইগ্যা দুঘণ্টা সময় চাহিয়্যাছিনু। তা-ও দিলেন না।’
উচ্ছেদ অভিযানে আসা রাজশাহী জেলা জজ আদালতের প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দেওয়া আদালতের নাজির বিশ্বজিৎ ঘোষ জানান, গোদাগাড়ী সহকারী জজ আদালতে দায়ের করা মামলায় উচ্ছেদের আদেশ দেন গোদাগাড়ী সহকারী জজ আদালতের বিচারক। এ মামলার বাদী আলমগীর কবির দিং ও বিবাদী সোনা দিং (সনাতন সরেন)। উচ্ছেদ অভিযানের সময় নাসির উদ্দিন নামে এক আইনজীবী, গোদাগাড়ী থানার উপপরিদর্শক আবুল কালাম উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, ‘বাড়িঘর ভাঙার আগে আমরা ভুক্তভোগীদের বলেছিলাম, বাদীর সঙ্গে সমঝোতা করে সময় নেওয়ার জন্য। কিন্তু বাদী রাজি না হওয়ায় আমরা আদালতের নির্দেশে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে বাদীকে দখল বুঝিয়ে দিয়েছি।’
মামলার বাদীদের একজন আলমগীর কবির বলেন, ‘আদালতের উচ্ছেদ আদেশ পেয়ে আমি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বলেছি, তারা নিজেরা যেন বাড়িঘর ভেঙে নিয়ে সরে যান। কিন্তু তারা সেটা মানেননি।’
জানতে চাইলে গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল আহম্মেদ বলেন, উচ্ছেদের বিষয়টি আমাকে জানানো হয়নি। আদালতের নির্দেশে উচ্ছেদ হয়েছে শুনেছি। শোনার পর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে বলেছি, তাদের থাকার ব্যবস্থা করতে।