
নেছারাবাদে দুই মাথাওয়ালা শিশুর জন্ম, চার ঘণ্টা পর মৃত্যু
নিজস্ব প্রতিবেদক, পিরোজপুর
পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলায় এক বিরল ও বিস্ময়কর ঘটনার জন্ম দিয়েছে চিকিৎসা জগতেও আলোড়ন। উপজেলার নেছারাবাদ পৌরসভার জাহানারা হাসপাতালে এক গৃহবধূর গর্ভে জন্ম নেয় দুই মাথা বিশিষ্ট এক শিশু। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) রাত ৯টার দিকে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে শিশুটির জন্ম হয়। তবে জন্মের মাত্র চার ঘণ্টা পর, রাত ১টার দিকে শিশুটি মারা যায়।
হাসপাতালের পরিচালক মো. রুহুল আমিন আকন জানান, মঙ্গলবার বিকেলে প্রসূতি মা চৈতি মণ্ডল (২০) হাসপাতালে ভর্তি হন। আলট্রাসোনোগ্রামে দেখা যায়, তার গর্ভে জমজ শিশু রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। পরে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. নরেশ চন্দ্র বড়াল-এর পরামর্শে সিজারিয়ান অপারেশন করা হয়। কিন্তু অপারেশনের পর দেখা যায়, এটি জমজ নয় — বরং একটি শিশুই, যার দুটি মাথা ছিল।
ডা. নরেশ চন্দ্র বড়াল বলেন,
“আলট্রাসোনোগ্রাম রিপোর্ট দেখে আমরা ভেবেছিলাম জমজ শিশু হতে পারে। কিন্তু জন্মের পর দেখা যায় একটি শিশুর শরীরে দুটি মাথা যুক্ত। এটি চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় ‘পলিসেফালি’ নামক এক বিরল জন্মগত ত্রুটি। শিশুটির অন্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ স্বাভাবিক ছিল, তবে এমন অবস্থায় সাধারণত শিশুর টিকে থাকা খুবই কঠিন।”
জানা যায়, চৈতি মণ্ডল পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার লিমনের স্ত্রী। তার বাবার বাড়ি পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার রোংগাকাঠি গ্রামে।
চৈতি প্রথমবারের মতো মা হয়েছেন, কিন্তু নবজাতকের এমন অস্বাভাবিক অবস্থা পরিবারকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে।
হাসপাতালের পরিচালক মো. রুহুল আমিন আকন আরও বলেন,
“শিশুটি জন্মের পর প্রায় চার ঘণ্টা জীবিত ছিল। আমরা তাকে অক্সিজেন ও পর্যবেক্ষণে রাখলেও রাত ১টার দিকে তার মৃত্যু হয়। বর্তমানে শিশুটির মা চৈতি মণ্ডল সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন এবং তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।”
এদিকে দুই মাথাওয়ালা শিশুর জন্মের খবর ছড়িয়ে পড়তেই স্থানীয়রা হাসপাতালে ভিড় জমায়। অনেকে বিরল এই শিশুটিকে একনজর দেখার জন্য রাতেই হাসপাতালে আসেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরে ভিড় নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে সহায়তা নিতে বাধ্য হয়।
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ‘পলিসেফালি’ বা দুই মাথা বিশিষ্ট শিশু জন্ম নেয় খুবই বিরলভাবে — প্রায় ২০ লাখ জন্মে এমন একটি ঘটনা ঘটে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিশুটি দীর্ঘ সময় বাঁচে না, কারণ দুটি মস্তিষ্ক এবং একটি শরীরের সমন্বয় সম্ভব হয় না।
মানবিক দিক থেকে এই ঘটনাটি স্থানীয় সমাজে গভীর আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কেউ একে ‘অলৌকিক’ বলছেন, কেউবা ‘প্রকৃতির রহস্য’। কিন্তু চিকিৎসা মহল বলছে, এটি একটি দুর্ভাগ্যজনক জেনেটিক ত্রুটি ছাড়া কিছুই নয়।