খতিব মোহেববুল্লাহর অপহরণ নাটকের পর্দাফাঁস: আদালতে স্বীকারোক্তি, পুলিশের চাঞ্চল্যকর তথ্য

4 week ago
VIEWS: 155

নিজস্ব প্রতিবেদক :

গাজীপুরের টঙ্গীর বিটিসিএল টিঅ্যান্ডটি কলোনি জামে মসজিদের খতিব মুফতি মোহাম্মদ মোহেববুল্লাহ মিয়াজীর তথাকথিত অপহরণের ঘটনাটি শেষ পর্যন্ত পুরোপুরি সাজানো নাটক হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) বিকেলে গাজীপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত–৪–এর বিচারক যুবায়ের রশীদের কাছে স্বেচ্ছায় নিখোঁজ হওয়ার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন তিনি। আদালত তাঁকে পরিবারের জিম্মায় দেওয়ার নির্দেশ দেন।

ঘটনার সূত্রপাত ২২ অক্টোবর সকালে, যখন খতিব মোহেববুল্লাহ টঙ্গীর বাসা থেকে হাঁটতে বের হয়ে আর ফিরে আসেননি। পরদিন পঞ্চগড় সদর ইউনিয়নের সিতাগ্রাম হেলিপ্যাড এলাকার পাশে একটি কলাগাছের সঙ্গে শিকলবদ্ধ অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে পুলিশ। তাঁর দুই পা তাতে বাঁধা ছিল, যা দেখে স্থানীয়রা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা প্রথমে অপহরণ মনে করেন। পরে হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় তিনি দাবি করেন, তাঁকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে তুলে অজ্ঞাত কয়েকজন অপহরণ করেছিল, এমনকি তাঁকে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। তিনি আরও অভিযোগ করেন, গত ১১ মাস ধরে তাঁকে বেনামি চিঠি দিয়ে অখণ্ড ভারত ও ইসকনের পক্ষে বক্তব্য দিতে চাপ দেওয়া হচ্ছিল।

তবে তদন্তে নামার পরই চিত্র পাল্টে যায়। গাজীপুর মহানগর পুলিশ টঙ্গীর টিঅ্যান্ডটি কলোনি জামে মসজিদ এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার একাধিক সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে। সেখানে দেখা যায়, ২২ অক্টোবর সকাল ৬টা ৪৯ মিনিটে মোহেববুল্লাহ স্বাভাবিকভাবেই হাঁটতে বের হচ্ছেন। পরবর্তী ফুটেজে সকাল ৭টা ১৭ মিনিটে তাঁকে একা রাস্তায় হাঁটতে দেখা যায়, কিন্তু আশপাশে কোনো অ্যাম্বুলেন্স বা সন্দেহজনক কিছু নেই। তিন ঘণ্টার ফুটেজে অপহরণের কোনো দৃশ্য পাওয়া যায়নি। এমনকি উত্তরবঙ্গগামী রাস্তায় বগুড়ার শেরপুর এলাকার পেন্টাগন হোটেলের সামনের সিসিটিভিতে দেখা যায়, তিনি বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে একাই হেঁটে যাচ্ছেন।

তদন্তে পুলিশ আরও জানতে পারে, মোহেববুল্লাহ পঞ্চগড়ে পৌঁছানো পর্যন্ত সারাক্ষণ তাঁর মুঠোফোন চালু ছিল এবং তিনি একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলছিলেন। পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, যদি তাঁকে সত্যিই অপহরণ করা হতো, তাহলে তাঁর পক্ষে ফোনে দীর্ঘ সময় কথা বলা সম্ভব হতো না। দুইজন প্রত্যক্ষদর্শীও সাক্ষ্য দিয়েছেন যে তাঁরা তাঁকে বাসে একা ভ্রমণ করতে দেখেছেন।

আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে মোহেববুল্লাহ জানান, ২২ অক্টোবর সকালে টঙ্গীর বাসা থেকে বের হয়ে তিনি ‘জিন-জাদুর প্রভাবে’ অবচেতন মনে মাজুখান এলাকায় চলে যান। এরপর অটোরিকশায় পুবাইল থানার মীরের বাজার ও বাসন থানার ভোগড়া বাইপাস হয়ে ঢাকার গাবতলী যান। সেখান থেকে শ্যামলী পরিবহনের বাসে পঞ্চগড়ের উদ্দেশে রওনা দেন। পথে বগুড়ার শেরপুরে নামাজ শেষে আবার বাসে ওঠেন এবং রাত ১১টার দিকে পঞ্চগড়ে পৌঁছান। তিনি বলেন, “রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া একটি ছোট তালাযুক্ত শিকল অবচেতন মনে পায়ে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়ি বা অচেতন হয়ে যাই। পরে চোখ খুলে দেখি, আমি হাসপাতালে।”

গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) মোহাম্মদ তাহেরুল হক চৌহান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এটি সম্পূর্ণ একটি সাজানো নাটক ছিল। খতিব নিজেই নিজের পায়ে শিকল লাগিয়ে ওই অবস্থায় শুয়ে ছিলেন।” তিনি আরও জানান, যেহেতু খতিব নিজেই মামলার বাদী ও ‘ভুক্তভোগী’, তাই তাঁকে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং তাঁর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।

একসময় যাঁর অপহরণের খবরকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয়েছিল, সেই খতিবের স্বীকারোক্তির পর পুরো ঘটনার রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। পুলিশ বলছে, এখন তারা ঘটনার পেছনের উদ্দেশ্য ও মানসিক প্রেক্ষাপট খতিয়ে দেখছে।

এই ঘটনা দেশজুড়ে আলোচনার ঝড় তুলেছে। ধর্মীয় অনুভূতি জড়িয়ে থাকা একটি ‘অপহরণ নাটক’ এত বড় পরিসরে প্রভাব ফেলতে পারে—এ ঘটনাই তার বড় প্রমাণ।

to join the global Sanatani Hindu Community
Connect with Sanatani Hindus from all over the world — share, learn, and grow together.
Explore Questions, Bhajan Lyrics, Leelas, Feeds, Business Pages, Products, plus Shlokas, Events, Courses, Jobs, Marriage, Help Posts, and more.
মন্তব্য করতে Login অথবা Registration করুন