
ভয়াল ৩০ অক্টোবর — নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর বর্বরোচিত সাম্প্রদায়িক হামলার নবম বর্ষপূর্তি
২০১৬ সালের সেই নৃশংস হামলায় কেঁপে উঠেছিল পুরো বাংলাদেশ; নয় বছর পরও ভুক্তভোগীদের মুখে একই আহ্বান — ‘বিচার চাই’
নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি:
আজ ভয়াল ৩০ অক্টোবর, বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কময় দিন — ২০১৬ সালের এই দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সংঘটিত হয়েছিল ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক হামলা।
একটি ভুয়া ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে উসকানির মাধ্যমে সংগঠিত ওই হামলায় পুড়িয়ে দেওয়া হয় শতাধিক ঘরবাড়ি ও মন্দির, লুটপাট করা হয় দোকানপাট ও উপাসনালয়।
জ্বলেছিল ঘর, ভাঙচুর হয়েছিল মন্দির
২০১৬ সালের ৩০ অক্টোবর সকাল থেকেই নাসিরনগরের বিভিন্ন এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। দুপুরের পর কয়েকটি উগ্র গোষ্ঠীর মিছিল বের হয়, এবং উসকানিমূলক বক্তব্যের পরই হামলাকারীরা তাণ্ডব চালায় হিন্দু পল্লীগুলোতে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়—
১৫টিরও বেশি মন্দির ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়,
১০০টিরও বেশি বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়,
অসংখ্য পরিবার হয়ে পড়ে গৃহহীন ও নিঃস্ব।
সেদিন নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে বেড়ান আশেপাশের গ্রামে।
মিথ্যা অপপ্রচারের শিকার — নিরপরাধ রসরাজ দাস
ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন এক সাধারণ মৎস্যজীবী রসরাজ দাস, যিনি সম্পূর্ণ নিরপরাধ। তার নামে একটি ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে ধর্ম অবমাননার পোস্ট দেওয়া হয়— যা আসলে ছিল পরিকল্পিত উস্কানি।
এই মিথ্যা প্রচারণা ছড়িয়ে পড়তেই উত্তেজিত জনতা হিন্দু পল্লীতে হামলা চালায়।
দুঃখজনক হলো—
রসরাজ দাস আজও সেই মিথ্যা মামলার ঘানি টানছেন, অথচ মূল অপরাধীরা অধিকাংশই অদণ্ডিত ও প্রভাবশালী অবস্থানে রয়েছেন।
বিচারের অগ্রগতি: ধীরগতির চাকা
ঘটনার পর প্রায় ১০টিরও বেশি মামলা দায়ের করা হলেও, নয় বছর পরও বিচার কার্যক্রম তেমন অগ্রসর হয়নি।
অধিকাংশ মামলাই তদন্ত পর্যায়ে আটকে আছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবি, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় এ ধরনের হামলা বারবার ঘটছে দেশে।
এক ভুক্তভোগী বলেন—
“আমরা ঘর হারিয়েছি, বিশ্বাস হারিয়েছি। কিন্তু ন্যায়বিচারের আশাটুকু এখনো ছাড়িনি।”
আরেকজন স্থানীয় শিক্ষক বলেন—
“রসরাজ এখনো আদালতে হাজিরা দেন, কিন্তু হামলাকারীরা রাজপথে ঘুরে বেড়ায়— এটা কেমন বিচার?”
প্রশ্ন রয়ে যায়
কেন এখনো মামলাগুলোর নিষ্পত্তি হয়নি?
কেন উস্কানিদাতাদের খুঁজে বের করা হলো না?
কেন প্রতিবারই ‘ভুয়া পোস্ট’-এর নাটক সাজিয়ে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয়?
রাষ্ট্র কি সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে?