
ভালোবাসার সংসারে দুর্ঘটনার অন্ধকার: শয্যাশায়ী অনন্ত, চোখের জলে পল্লবীর জীবনযুদ্ধ
আলিপুরদুয়ার, পশ্চিমবঙ্গ:
ভালোবাসার টানে সংসার গড়ে ছিল তারা—অসমের তামারহাটের পল্লবী সাহা ও আলিপুরদুয়ারের রাধানগরের অনন্ত শীল। মোবাইল ফোন কলিংয়ের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল তাদের সম্পর্ক। চার বছরের দীর্ঘ প্রেমের পর পেশায় ক্ষৌরকার অনন্ত বিয়ের প্রস্তাব দেন পল্লবীকে। তবে পরিবারের আপত্তিতে তিন মাস আগে পালিয়ে বিয়ে করেন দু’জনে।
টিনের ছাউনির একচালা ঘরে মা, ভাই এবং স্ত্রীকে নিয়ে অনন্তের ছোট সংসার—সাদামাটা অথচ ভালোবাসায় ভরপুর। সীমিত আয়ে চলে সংসার, কিন্তু মন খারাপের কোনো চিহ্ন ছিল না। দুর্গাপূজা, লক্ষ্মীপূজা, কালীপূজা—সব উৎসবেই আনন্দ ভাগাভাগি করে নিয়েছিল এই পরিবার।
কিন্তু কালীপূজার দিনেই হঠাৎ ঘটে যায় অঘটন। সন্ধ্যার আগে দোকান বন্ধ করে বন্ধুর বাইকে বাড়ি ফিরছিলেন অনন্ত। পথেই একটি টোটোর সঙ্গে সংঘর্ষে তার একটি পা গুরুতরভাবে জখম হয়। দ্রুত আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখান থেকে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজে রেফার করা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সঠিক চিকিৎসায় সুস্থ হতে অন্তত ছয় মাস সময় লাগবে।
এদিকে সংসারে নেমে এসেছে অভাবের অন্ধকার। চিকিৎসার খরচ সামলাতে গিয়ে হাতে নেই টাকা, পেটে নেই ভাত। রেশনের চালেই কোনোভাবে আধপেটা খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন পল্লবী, তার শাশুড়ি ও ছোট দেবর। বাড়ির অমতে বিয়ে করায় পল্লবীর জন্য নিজ পিতৃগৃহের দরজাও চিরতরে বন্ধ। একদিকে শয্যাশায়ী স্বামী, অন্যদিকে অভাবের ঘূর্ণিঝড়—এই দুইয়ের মাঝে দাঁড়িয়ে আজ এক কঠিন লড়াই লড়ছেন কুড়ি বছরের পল্লবী।
তবুও হাল ছাড়েননি তারা। ইতিমধ্যে এলাকাবাসী ও কিছু সমাজসেবী এগিয়ে এসেছেন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে। আশার আলো দেখছেন পরিবারটি—অনন্ত সুস্থ হয়ে আবার সেলুনে কাজ শুরু করতে পারলে হয়তো দিন ফিরবে, মুখে ফিরবে হাসি।
আজও এই ভালোবাসার গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয়—
সুখ মানে বিলাসিতা নয়, প্রিয়জনের সঙ্গে দুই মুঠো ভাত ভাগ করে নেওয়াই সত্যিকারের শান্তি।