বিয়ের দিন ঠিক করতে গিয়ে গণপিটুনিতে নিহত সেই রুপলালের মেয়ের বিয়ে আজ

1 week ago
VIEWS: 75

ডিজিটাল রিপোর্ট ;

রংপুরের তারাগঞ্জে আজ বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন নুপুর রবিদাস। সাজানো হয়েছে গেট ও প্যান্ডেল, বরযাত্রী ও আত্মীয়স্বজনদের আপ্যায়নের জন্য তিনটি খাসি কেনা হয়েছে। তবে আনন্দের মধ্যে ভাসছে গভীর শোক—মায়ের মতো বাবার আশীর্বাদ আজ নেই।

এই মেয়ের বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করেত গিয়েই নিহত হন তারাগঞ্জের ঘনিরামপুরের রূপলাল দাস (৪০) ও মিঠাপুকুর উপজেলার বালুয়াভাটা গ্রামের প্রদীপ দাস (৩৫)।

রূপলাল ছিলেন তারাগঞ্জ বাজারের একজন জুতা সেলাইকারী। তার স্ত্রী ভারতী রানী স্থানীয় জুতা কারখানায় কাজ করতেন, যদিও অসুস্থতার কারণে বেশি দিন কাজ চালাতে পারেননি। রূপলাল দুই মেয়ের পড়াশোনা ও সংসারের দৈনন্দিন খরচ মেটাতেন। বড় মেয়ে নুপুর ডিগ্রি পর্যায়ে পড়াশোনা করছেন, ছোট মেয়ে রুপা স্থানীয় বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণিতে। একমাত্র ছেলে জয় নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত।

১০ আগস্ট রুপলালের বাড়িতে মেয়ে নুপুর রবিদাসের বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করার অনুষ্ঠান ছিল। মিঠাপুকুরের বাসিন্দা জামাই প্রদীপ রবিদাসকে বিয়ের সেই আয়োজনে থাকার জন্য বাড়িতে ডাকেন রুপলাল। এরপর ৯ আগস্ট রাত সাড়ে ৯টার দিকে তারাগঞ্জ-কাজিরহাট ছেতরা বটতলায় চোর সন্দেহে রুপলাল ও প্রদীপকে স্থানীয়রা মারধর করে এবং পরে বুড়িরহাট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গণপিটুনি দিলে ঘটনাস্থলে রুপলালের মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত জামাই প্রদীপ পরদিন ১০ আগস্ট রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। বাবা ও দুলাভাইয়ের মৃত্যুর পর থমকে যায় নুপুরের বিয়ের আলোচনা।

আজ, বাবার শোক ও ভয়াবহ স্মৃতি নিয়ে নুপুরের বিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। হিন্দু রীতি অনুযায়ী মেয়েকে স্বর্ণালঙ্কার, ঘরসজ্জার সরঞ্জমাদি ও বরযাত্রীদের আপ্যায়নের জন্য প্রায় ৪০০ মানুষকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ভারতী রানী মেয়ের বিয়ের সব আয়োজন সামলাচ্ছেন নিজের পরিশ্রমে।

নুপুর রবিদাস বলেন, ‘আমার বিয়ের আয়োজন হলেও মনের ভেতরে বাবা হারানোর কষ্ট রয়ে গেছে। আমার বাবার হত্যাকারীরা এখনও অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সবাই দেখছে, কিন্তু কেউ তাদের বিষয়ে কিছু করছে না। পুলিশও তাদের গ্রেপ্তার করছে না।’

জয় রবিদাস বলেন, ‘বাবা নেই, এই বয়সে আমাকে বিয়ের সব কাজ করতে হচ্ছে। হাট থেকে খাসি কিনে এনেছি। জামাই বাবুকে উপহার দেওয়ার জন্য, ঘর সাজানোর সরঞ্জাম কিনেছি। এছাড়া স্বর্ণের আংটি, চেইন, চুড়ি দিতে হচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রশাসনসহ কেউ আমাদের খোঁজ নেয়নি। আমার মামা আমাদের অভিভাবক হিসেবে দেখাশোনা করছেন।’

ভারতী রবিদাস বলেন, ‘আমার স্বামী ও জামাইকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ছোট ছোট ছেলেমেয়ে আমার বাড়িতে। তারা কীভাবে পড়াশোনা করবে, আমি কীভাবে সংসার চালাব, তা নিয়েই দুশ্চিন্তায় আছি। মেয়ের বিয়েতে অনেক টাকা লাগছে। এখন ধার-দেনা করে মেয়ের বিয়ে দিতে হচ্ছে। যদি কেউ সহযোগিতা করতেন, উপকার হতো। অনেকেই তো কথা দিয়েছিল, কিন্তু এখন কেউ খোঁজ রাখে না।’

স্থানীয় প্রশাসন কিছু সহায়তা দিয়েছে। তারাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুবেল রানা জানিয়েছেন, নুপুরের বিয়ের জন্য উপজেলা তহবিল থেকে এক লাখ টাকা এবং সমাজসেবা কার্যালয় থেকে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নুপুরের পড়াশোনার জন্য শিক্ষাভাতা, ভারতী রবিদাসের জন্য বিধবাভাতা এবং জয়লালের ব্যবসার জন্য দোকানঘরের বরাদ্দ করা হয়েছে।

গত ৯ আগস্ট রাতে মিঠাপুকুরের ছড়ান বালুয়া এলাকা থেকে নুপুরের জামাই প্রদীপ রালকে নিয়ে রূপলাল বাড়ি ফেরার পথে স্থানীয় কয়েকজন তাদের পথরোধ করে চোর সন্দেহে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। সন্দেহভাজনরা প্রদীপের ব্যাগ তল্লাশি করে ‘স্পিড ক্যানের’ বোতলে দুর্গন্ধযুক্ত পানীয় এবং কিছু ওষুধ পান। বোতল খোলার পর এলাকার কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়লে উত্তেজিত জনতা রূপলাল ও প্রদীপকে বুড়িরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে নিয়ে আসে। লাঠিসোঁটা ও লোহার রড দিয়ে মারধরের একপর্যায়ে গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করা হয়। রূপলালকে মৃত ঘোষণা করা হয়, এবং পরদিন প্রদীপও মারা যান।

এই ঘটনায় ১০ আগস্ট ভারতী রানী তারাগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন। এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

to join the global Sanatani Hindu Community
Connect with Sanatani Hindus from all over the world — share, learn, and grow together.
Explore Questions, Bhajan Lyrics, Leelas, Feeds, Business Pages, Products, plus Shlokas, Events, Courses, Jobs, Marriage, Help Posts, and more.
মন্তব্য করতে Login অথবা Registration করুন