
‘বিয়ের আয়োজন হলেও মনে বাবা হারানোর কষ্ট’
রংপুর;
রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ঘনিরামপুর গ্রামে আজ রোববার উৎসবের আমেজ। বাড়ির উঠানে টাঙানো হয়েছে রঙিন প্যান্ডেল, রান্নাঘরে ব্যস্ততা। বরযাত্রী ও অতিথিদের আপ্যায়নে কাটা হয়েছে তিনটি খাসি। কিন্তু আনন্দমুখর এই আয়োজনের মাঝেও ঘরের বাতাস ভারী হয়ে আছে অজস্র দীর্ঘশ্বাসে।
আজ বিয়ে হচ্ছে রূপলাল রবিদাসের বড় মেয়ে নূপুরের। বাবা বেঁচে থাকলে আজ তার হাতেই মেয়ের মাথায় পড়তো আশীর্বাদের ছোঁয়া। কিন্তু সেই বাবা আর নেই।
গত ৯ আগস্ট রাতে তারাগঞ্জ–কাজিরহাট সড়কের বুড়িরহাট বটতলায় ভ্যানচোর সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত হন রূপলাল (৪৮) এবং তার ভাগ্নি জামাই প্রদীপ লাল রবিদাস (৪৭)। পরদিন ১০ আগস্ট রূপলালের বাড়িতে নূপুরের বিয়ের দিন ঠিক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই দিন পরিণত হয় অন্ধকার শোকে। থেমে যায় নূপুরের বিয়ের আয়োজন।
দীর্ঘ তিন মাস পর পরিবারের সিদ্ধান্তে আজ নূপুরের বিয়ে হচ্ছে। বরের নাম কমল রবিদাস। তিনি রংপুর সদর উপজেলার চন্দনপাট ইউনিয়নের বাসিন্দা।
রূপলালের স্ত্রী মালতী রানী বলেন, আমার স্বামী বেঁচে থাকলে আজ আমাকে ধার-দেনা করে মেয়ের বিয়ে দিতে হতো না। তবুও যেভাবেই হোক, মেয়ের বিয়ে দিচ্ছি। স্বামীর যে স্বপ্ন ছিল মেয়ের বিয়ে দেওয়া, আজ সেই ইচ্ছাপূরণ হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের পরিবারের অভিভাবকের মতো ছিলেন প্রদীপ লাল। নূপুরের বিয়ের তারিখ ঠিক করা ও হবু জামাইকে বায়না দেওয়ার অনুষ্ঠানে তাকে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু সেই আয়োজনের আগের দিনই দুজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
রূপলালের ছেলে নবম শ্রেণির ছাত্র জয় রবিদাস বলে, বাবা নেই, তাই আমাকেই সব সামলাতে হচ্ছে। খাসি কিনেছি, ঘর সাজানোর জিনিস কিনেছি, বোন জামাইয়ের জন্য উপহার নিচ্ছি। অনেক কষ্টে টাকা জোগাড় করছি।
নূপুর রবিদাস বলেন, আমার বিয়ের আয়োজন হলেও মনের ভেতরে বাবা হারানোর কষ্ট রয়ে গেছে। বাবার হত্যাকারীরা এখনো প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সবাই জানে তারা কারা, কিন্তু কেউ কিছু বলে না, পুলিশও গ্রেপ্তার করছে না।
রূপলাল ও প্রদীপ লাল পেশায় মুচি ছিলেন। তারাগঞ্জ বাজারের ফুটপাতে বসে জুতা সেলাই করতেন রূপলাল। তার পরিবারের তিন সন্তানের মধ্যে বড় নূপুর। তিনি তারাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের ছাত্রী। দ্বিতীয় ছেলে জয়। আর ছোট মেয়ে রুপা ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে।
তারাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবেল রানা বলেন, রূপলালের মৃত্যুর পর উপজেলা পরিষদের তহবিল থেকে নূপুরের বিয়ের জন্য এক লাখ টাকা ও সমাজসেবা কার্যালয় থেকে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। নূপুরের পড়াশোনার জন্য শিক্ষা ভাতা, তার মায়ের জন্য বিধবা ভাতা এবং ছেলে জয়ের ব্যবসার জন্য দোকান বরাদ্দের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রূপলাল ও প্রদীপ লাল হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।