
এক দিন পরই মৌলভীবাজারে মণিপুরি মহারাসলীলা: সব আয়োজন সম্পন্ন
শান্ত পাল,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি, HindusNews :
মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় মণিপুরি সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসব মণিপুরি মহারাসলীলা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আর মাত্র এক দিন পর, আগামী ৫ নভেম্বর (বুধবার)। কার্তিক মাসের পূর্ণিমা তিথিকে কেন্দ্র করে আয়োজিত এই মহোৎসবকে ঘিরে ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে সব প্রস্তুতি।
উৎসবের আয়োজন হবে উপজেলার মাধবপুর ও আদমপুর—এই দুটি এলাকায়। এ উপলক্ষে দুই স্থানেই বসবে বর্ণাঢ্য মেলা। উৎসবের আগমনে মণিপুরি অধ্যুষিত গ্রামগুলো এখন সাজসাজ রব, চলছে শেষ মুহূর্তের মহড়া ও প্রস্তুতি।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, উৎসব নির্বিঘ্ন করতে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মূল মঞ্চ ও আশপাশের এলাকায় পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকদের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারিও জোরদার করা হয়েছে।
মণিপুরি গ্রামগুলো ঘুরে দেখা যায়, নারীরা ঐতিহ্যবাহী পোশাকে গোষ্ঠলীলা বা রাখালনৃত্য এবং রাসনৃত্য–এর মহড়ায় ব্যস্ত। জেলার বৃহত্তম এই উৎসব উপলক্ষে মাধবপুর শিববাজার জোড়া মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হবে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি সম্প্রদায়ের ১৮৩তম মহারাসলীলা, এবং আদমপুর মণিপুরি কালচারাল কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে মৈতৈ মণিপুরি সম্প্রদায়ের ৪০তম মহারাস উৎসব।
মাধবপুরের শিববাজার উন্মুক্ত মঞ্চে বিকেলে অনুষ্ঠিত হবে রাখালনৃত্য, আর রাতে জোড়া মণ্ডপে মহারাসলীলার মূল অনুষ্ঠান। পাশাপাশি, রাস উপলক্ষে বুধবার বিকেল ৫টা ও সন্ধ্যা ৬টায় মণিপুরি ললিতকলা একাডেমি মিলনায়তনে মণিপুরি থিয়েটারের আয়োজনে প্রদর্শিত হবে “নুংশিপি” নামের চলচ্চিত্র।
অন্যদিকে আদমপুর এলাকাতেও সমান উৎসাহে অনুষ্ঠিত হবে রাখালনৃত্য ও রাসলীলা। যদিও বিষ্ণুপ্রিয়া ও মৈতৈ সম্প্রদায় পৃথক স্থানে উৎসব পালন করে, তবু দুই আয়োজনই সমানভাবে বর্ণিল ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে পূর্ণ।
মণিপুরি ললিতকলা একাডেমির উপপরিচালক (অ. দা.) প্রভাস চন্দ্র সিংহ জানান, “মণিপুরের রাজা ভাগ্যচন্দ্রই প্রথম মণিপুরে রাসমেলা প্রবর্তন করেন। পরে, ১৮৪২ সালে কমলগঞ্জের মাধবপুরে প্রথম মহারাসলীলা উদযাপিত হয়। তখন থেকেই এখানকার মণিপুরি সমাজে এই ঐতিহ্য বহমান।”
মণিপুরি মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ বলেন, “রাস উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও সর্বস্তরের মানুষ একত্রিত হচ্ছে। পাড়া-মহল্লায় চলছে মহড়া, সাজসজ্জা ও পূজার প্রস্তুতি। আমরা গর্বিত ১৮৩তম মহারাসলীলা আয়োজন করতে পেরে।”
মৌলভীবাজারের এই ঐতিহ্যবাহী মহারাসলীলা শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠানই নয়—এটি মণিপুরি সংস্কৃতি, সঙ্গীত, নৃত্য ও ভক্তিমূলক জীবনের এক মহামিলন। আগামী বুধবার রাতে এই মাটিতে আবারও প্রতিধ্বনিত হবে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলা ও গোপীদের প্রেমভক্তির মাধুর্য।