
কান্তজিউ মন্দিরে রাস পূর্ণিমা উপলক্ষে এক মাসব্যাপী রাস মেলা শুরু হচ্ছে ৫ নভেম্বর শিব মন্দিরের পবিত্রতা রক্ষায় বাঁশের বেড়া — স্থানীয়দের প্রশংসায় ভাসছে উদ্যোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক,দিনাজপুর:
দিনাজপুরের ঐতিহাসিক কান্তজিউ মন্দির প্রাঙ্গণে আসন্ন রাস পূর্ণিমা উপলক্ষে আগামী ৫ নভেম্বর থেকে শুরু হতে যাচ্ছে এক মাসব্যাপী রাস মেলা। ইতিমধ্যেই দেশের নানা প্রান্ত থেকে ভক্ত ও দর্শনার্থীরা সেখানে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। প্রতিবছরের মতো এবারও রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে কান্তজিউ মন্দির চত্বর এখন সাজসজ্জায় ও প্রস্তুতিতে মুখর।
মন্দিরের পবিত্রতা রক্ষায় এবার একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কান্তজিউ মন্দিরের পাশেই অবস্থিত প্রাচীন শিব মন্দিরের উঠানে বাঁশের বেড়া দিয়ে বাউন্ডারি তৈরি করা হয়েছে, যাতে কেউ জুতা বা স্যান্ডেল পরে মন্দিরের উঠানে প্রবেশ করতে না পারে। স্থানীয় ভক্তরা এই উদ্যোগকে অত্যন্ত ইতিবাচক ও ধর্মীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রয়োজনীয় বলে মনে করছেন। তারা বলছেন, মন্দিরের পবিত্রতা বজায় রাখতে এ ধরনের পদক্ষেপ সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। যারা এই কাজে যুক্ত ছিলেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন এলাকার ধর্মপ্রাণ মানুষ।
অনেকেই পরামর্শ দিয়েছেন, এই বাঁশের বেড়ায় যদি সুন্দরভাবে রঙের প্রলেপ দেওয়া হয়, তবে এটি আরও আকর্ষণীয় দেখাবে এবং মন্দিরের পরিবেশে শৃঙ্খল ও সৌন্দর্যের এক অনন্য রূপ যোগ করবে। আশা করা হচ্ছে, শিগগিরই সেই কাজও সম্পন্ন হবে।
দিনাজপুর শহর থেকে প্রায় বিশ কিলোমিটার উত্তরে এবং কাহারোল উপজেলা সদর থেকে সাত কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে সুন্দরপুর ইউনিয়নের ঢেঁপা নদীর তীরে অবস্থিত এই প্রাচীন কান্তজিউ মন্দির। এটি দিনাজপুর-তেঁতুলিয়া মহাসড়কের পশ্চিমে অবস্থিত, যা দেশের অন্যতম ঐতিহাসিক ও নান্দনিক স্থাপত্য। ইতিহাস অনুযায়ী, রাজা প্রণনাথ রায়ের শাসনামলে প্রায় ১৭০৪ সালের আশেপাশে নির্মিত হয় এই মন্দিরটি। কান্তজিউ মন্দিরকে অনেকে ‘নবরত্ন মন্দির’ নামেও চেনে। এর দেয়ালে থাকা পোড়ামাটির কারুকাজ এখনো বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এক অনন্য নিদর্শন হয়ে আছে।
রাস পূর্ণিমা উপলক্ষে প্রতিবছর এই মন্দিরে আয়োজিত হয় রাস উৎসব ও মেলা। হাজার হাজার ভক্ত রাধা-কৃষ্ণের লীলা স্মরণে এখানে ভজন, কীর্তন ও পূজায় অংশ নেন। মেলার সময় মন্দির প্রাঙ্গণ হয়ে ওঠে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উচ্ছ্বাসের এক মিলনমেলা। এ বছরও রাস মেলা উপলক্ষে স্থানীয় প্রশাসন ও মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে নিরাপত্তা, পরিচ্ছন্নতা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
রাস পূর্ণিমার এই পবিত্র দিনে কান্তজিউ মন্দির সকল ভক্ত ও দর্শনার্থীর জন্য উন্মুক্ত থাকবে। আয়োজনকারীরা সকল ধর্মপ্রাণ মানুষের প্রতি আমন্ত্রণ জানিয়েছেন যেন তারা এই পবিত্র উৎসবে অংশ নিয়ে সনাতন ধর্মীয় ঐতিহ্যের অংশীদার হন।