সিলেটে রাধা গোবিন্দ জিউর আখড়ার ১২ কোটি টাকার সম্পত্তি আত্মসাৎ! দুই পক্ষের দ্বন্দ্বে অবশেষে তালাবদ্ধ মন্দির, পূজা-অর্চনা বন্ধ

5 days ago
VIEWS: 346

নিজস্ব প্রতিবেদক :

সিলেট নগরীর জিন্দাবাজার এলাকার ঐতিহ্যবাহী শ্রীশ্রী রাধা গোবিন্দ জিউর আখড়া মন্দির ঘিরে আবারও উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। দেবোত্তর সম্পত্তি আত্মসাৎ, তহবিল তছরুপ ও মন্দির পরিচালনা কমিটির বৈধতা নিয়ে চলমান বিরোধের জেরে শনিবার দুপুরে মন্দিরে ঝুলে গেছে তালা। দীর্ঘদিনের জটিলতা ও মামলার পর সনাতনী দুই পক্ষের সংঘর্ষের আশঙ্কায় সাবেক সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর উপস্থিতিতে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয় মন্দিরের মূল ফটকে। এতে আপাতত বন্ধ হয়ে গেছে পূজা-অর্চনা ও অন্যান্য ধর্মীয় কার্যক্রম।

ঘটনার সূত্রপাত বহু বছর আগে। তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, আখড়ার তৎকালীন সম্পাদক বিরজা মোহন দাশ পুরকায়স্থ দায়িত্বে থাকাকালীন কৌশলে আখড়ার দেবোত্তর ভূমি নিজের স্ত্রী উষারাণী দাশ পুরকায়স্থের নামে এসএ রেকর্ড করে নেন। পরে এ বিষয়ে মামলা করা হলে তদন্তে প্রমাণিত হয় যে আখড়ার পরিচালনা কমিটির সদস্যরা পরস্পরের যোগসাজশে বিভিন্ন সময়ে জায়গা হস্তান্তর ও বিক্রির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।

পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, আখড়ার উন্নয়নের নামে সরকারের কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত ভাড়া এবং বিভিন্ন দাতাদের অনুদানসহ মোট ১২ কোটি ২৭ লাখ টাকার বেশি অর্থ আখড়ার হিসাব থেকে আত্মসাৎ করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বৈধ অনুমোদন ছাড়াই তারা ২০০৪ সাল থেকে কমিটির নাম ব্যবহার করে ১৯ বছর ধরে মন্দির পরিচালনা করে আসছিলেন। জেলা প্রশাসকের অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও অসিত ভট্টাচার্য নিজেকে সম্পাদক দাবি করে প্রশাসনকে বিভ্রান্ত করেন।

এদিকে, শনিবার দুপুরে আখড়া কমিটির একাংশ সাধারণ সভা করার চেষ্টা করলে অপর পক্ষ বাধা দেয়। শুরু হয় বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতি। খবর পেয়ে সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং মন্দিরের গেটে তালা লাগানোর নির্দেশ দেন। তিনি জানিয়েছেন, আগামী সোমবার তিনি উভয় পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসবেন এবং শান্তিপূর্ণ সমাধান খোঁজার চেষ্টা করবেন।

মামলার বাদী ও আখড়ার বাসিন্দা রাহুল দেবনাথ জানান, আখড়া পরিচালনা কমিটির অনুমোদনের আবেদন ২০০৪ সালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জমা দেওয়া হলেও তা অনুমোদিত হয়নি। তবুও তারা অবৈধভাবে পরিচালনা চালিয়ে আসছে এবং কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি আত্মসাৎ করেছে। সম্প্রতি তার দায়ের করা মামলার তদন্তে ৩০ জনকে অভিযুক্ত করে পিবিআই প্রতিবেদন দাখিল করেছে।

অন্যদিকে পূজা উদযাপন কমিটির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মৃত্যুঞ্জয় ধর ভোলা জানান, পূজা উৎসব সামনে রেখে সাধারণ সভা করতে গেলে হামলার ঘটনা ঘটে। তার দাবি, “মন্দির কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিগত সম্পত্তি হতে পারে না, এটি ভক্ত ও সমাজের।”

মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, মন্দির কমিটি এবং স্থানীয় ভক্তদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। উভয় পক্ষের অভিযোগ পুলিশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।

সনাতনী সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রাচীন এই আখড়া মন্দিরের ওপর নিয়ন্ত্রণ ও সম্পত্তির মালিকানা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আইনি লড়াই চললেও, সাম্প্রতিক ঘটনায় সাধারণ ভক্তরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ও মন্দিরে স্বাভাবিক পূজা-অর্চনা পুনরায় চালুর দাবি জানিয়েছেন।

to join the global Sanatani Hindu Community
Connect with Sanatani Hindus from all over the world — share, learn, and grow together.
Explore Questions, Bhajan Lyrics, Leelas, Feeds, Business Pages, Products, plus Shlokas, Events, Courses, Jobs, Marriage, Help Posts, and more.
মন্তব্য করতে Login অথবা Registration করুন