
ধর্মান্তরিত স্বর্ণা রায়ের করুণ পরিণতি: প্রেম, প্রতারণা নাকি পরিকল্পিত মৃত্যু?
নিজস্ব প্রতিবেদক :
বরিশাল শহরে ঘটে গেছে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। ধর্মান্তরিত এক তরুণী স্বর্ণা রায়ের করুণ পরিণতিতে শোকাহত তার পরিবার ও স্থানীয় সমাজ। মাত্র ২২ বছর বয়সেই অকাল মৃত্যু হলো এই তরুণীর, যিনি সম্প্রতি প্রেমের টানে ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলমান হয়েছিলেন।
জানা গেছে, বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ থানার ব্রাহ্মণদিয়া গ্রামের স্বর্ণা রানী রায় ও তার মা শহরের কাউনিয়া থানার ক্লাবরোড এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। তিনি বগুড়া রোডের “বরিশাল মেডিনোভা” নামের একটি বেসরকারি মেডিকেল প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মেডিনোভা প্রতিষ্ঠানের মালিকের বন্ধু এবং একসময়ের ব্যবসায়িক অংশীদার মো. রনির সঙ্গে স্বর্ণার পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। ধীরে ধীরে সম্পর্ক প্রেমে রূপ নেয়, এবং পরে গোপনে ধর্ম পরিবর্তন করে রনিকে বিয়ে করেন স্বর্ণা।
কিন্তু সুখ বেশিদিন টেকেনি। স্বর্ণা জানতে পারেন, রনি আগেই বিবাহিত এবং তার সংসারও রয়েছে। এই বিষয়টি জানার পর থেকেই তাদের মধ্যে শুরু হয় বিরোধ ও অশান্তি। স্থানীয়রা জানান, সম্প্রতি দুজনের মধ্যে একাধিকবার তীব্র বাকবিতণ্ডা হয়েছে।
গত ২৮ অক্টোবর (মঙ্গলবার) রাতে স্বর্ণা নিজ ঘরে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। খবর পেয়ে কাউনিয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে।
মৃত্যুর পর জানা যায়, স্বর্ণা ইতিমধ্যে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে ‘সুমাইয়া’ নাম ধারণ করেছিলেন। পুলিশ তদন্তে জানায়, মো. রনির সহযোগীরা দ্রুত ধর্মান্তর ও বিবাহের কাগজপত্র দেখিয়ে প্রশাসনের অনুমতিতে দাফন সম্পন্ন করে।
এদিকে মেয়ের মা গণমাধ্যমকে জানান, “আমার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। সে কখনোই এমন কিছু করতে পারে না। প্রেমের জালে ফেলে ওকে ধোঁকা দেওয়া হয়েছে।”
পুলিশ জানিয়েছে, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরই নিশ্চিত হওয়া যাবে এটি আত্মহত্যা নাকি হত্যা। কাউনিয়া থানার ওসি বলেন, “প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা মনে হলেও তদন্তে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে স্বর্ণার স্বামী রনিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।”
এই ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা বলছেন, “ভালোবাসার নামে ধর্মান্তরিত করে প্রতারণার ফাঁদে ফেলা এখন এক ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হচ্ছে। এমন ঘটনা আর যেন না ঘটে, প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে।”
হিন্দু সমাজে আলোড়ন সৃষ্টি করা এই মৃত্যু এখন এক বড় প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে — এটি কি প্রেমের পরিণতি, নাকি ধর্মান্তরিত এক মেয়ের ওপর নির্মম প্রতারণার শিকার হয়ে ঘটে যাওয়া এক পরিকল্পিত মৃত্যু?