
প্রাথমিক স্কুলে সংগীত শিক্ষক পদ বাতিলের প্রতিবাদে জাবিতে গানের মিছিল
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি :
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শরীরচর্চা শিক্ষক নিয়োগের পদ বাতিলের প্রতিবাদে গানে-গানে প্রতিবাদ জানিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। বুধবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে ‘কণ্ঠমুক্তির গান’ ব্যানারে শিক্ষার্থীরা এক ব্যতিক্রমধর্মী “গানের মিছিল” বের করেন। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে নতুন কলা ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরবর্তীতে সেখানে অনুষ্ঠিত হয় এক সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদী সমাবেশ।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা-২০২৫’-এ নতুন সংযোজিত সংগীত ও শরীরচর্চা সহকারী শিক্ষক পদ দুটি মৌলবাদী ও ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর আপত্তির মুখে বাতিল করা হয়েছে। তারা বলেন, সরকারের এই সিদ্ধান্ত কেবল শিক্ষা ব্যবস্থার মান কমাবে না, বরং দেশের সাংস্কৃতিক ও মানবিক বিকাশের পথেও একটি বড় বাধা সৃষ্টি করবে।
প্রতিবাদী সমাবেশে বক্তারা সাম্প্রতিক সময়ে নারী নির্যাতন, শ্রমিকদের ওপর দমন-পীড়ন, এবং ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়নের ঘটনাগুলোরও তীব্র নিন্দা জানান।
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী দুর্বার আদি বলেন,
“সংগীত ও শরীরচর্চা শিক্ষক নিয়োগ বাতিল, নাট্যোৎসব বন্ধ, মন্দিরে হামলা কিংবা মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তনের উদ্যোগ—এসবই আমাদের সাংস্কৃতিক সহাবস্থানের ওপর আঘাত। মুক্তিযুদ্ধ থেকে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত আমাদের শক্তির মূল ছিল সংস্কৃতি। এই আক্রমণ কেবল সংস্কৃতির নয়, আমাদের অস্তিত্বের ওপর। আমরা গান দিয়ে সেই অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং সুদান, ফিলিস্তিনসহ বিশ্বজুড়ে চলমান সব গণহত্যার বিরুদ্ধে ঐক্যের আহ্বান জানাচ্ছি।”
অন্যদিকে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী অদ্রিতা রায় বলেন,
“অন্তর্বর্তী সরকার ধারাবাহিকভাবে উগ্রবাদী প্রবণতা ও মব ভায়োলেন্স দমন করতে ব্যর্থ হয়েছে। সাংবিধানিক অধিকার রক্ষার বদলে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিগুলোকে আরও সাহসী করে তোলা হচ্ছে। এটি আমাদের সমাজের জন্য গভীর সংকেত।”
শিক্ষার্থীরা জানান, সংগীত ও শরীরচর্চা শিক্ষা একটি শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশের অপরিহার্য অংশ। অথচ উগ্র ধর্মীয় চাপে সরকার এই গুরুত্বপূর্ণ পদ দুটি বাতিল করে জাতিকে সাংস্কৃতিক অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
সমাবেশ শেষে শিক্ষার্থীরা একাত্ম কণ্ঠে গান গেয়ে বলেন—
“সংগীতের ওপর আঘাত, মানে মানবতার ওপর আঘাত।
সংস্কৃতির মাটিতে দাঁড়িয়ে আমরা প্রতিরোধ গড়বো।”
শিক্ষার্থীদের এই গানের মিছিল বর্তমানে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে। অনেকে একে সাংস্কৃতিক প্রতিবাদের নতুন ধারা হিসেবে দেখছেন।