
হিন্দু প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে বিয়ে — ধর্মান্তরিত নয়, দাবি বন্ধুর; লালমনিরহাটে কন্যাকে ত্যাজ্য ঘোষণার ঘটনায় নতুন মোড়!
HindusNews ডেস্কঃ
লালমনিরহাট সদর উপজেলার রামরাম গ্রামের বাসিন্দা শ্রী বিমল চন্দ্র মোহন্ত তাঁর একমাত্র কন্যা তন্দ্রা রানী মোহন্তকে ত্যাজ্য কন্যা হিসেবে ঘোষণা করার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম হয়েছে। প্রথমে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, তন্দ্রা এক বিধর্মী যুবকের সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে ধর্মান্তরিত হয়ে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। এতে সমাজে এবং পরিবারের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
শ্রী বিমল চন্দ্র মোহন্ত তাঁর লিখিত ঘোষণাপত্রে জানান, তিনি মৃত বিষ্ণু চরন মোহন্ত ও মৃত অঞ্জলী ময়ী মোহন্তের পুত্র। তাঁর কন্যা তন্দ্রা রানী মোহন্তের জন্ম ৪ ডিসেম্বর ২০০২ সালে। মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তিনি ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ সালে গাইবান্ধা জেলার দক্ষিণ মন্দুয়ার গ্রামের কৌশিক কুমার মোহন্তের সঙ্গে আইনানুগভাবে বিবাহ রেজিস্ট্রি সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে সামাজিকভাবে বিবাহ সম্পন্ন করারও প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু পরিবারের পরিকল্পনার বাইরে গিয়ে তন্দ্রা নিজ ইচ্ছায় অন্যত্র চলে যায়।
বিমল চন্দ্র মোহন্ত অভিযোগ করেন, ২৯ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে তাঁর কন্যা বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় এবং পরে জানা যায় সে ধর্মান্তরিত হয়ে এক বিধর্মী যুবকের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। এই ঘটনায় তিনি ও তাঁর পরিবার মারাত্মক সামাজিক অপমানে পড়েন। সমাজের সামনে মুখ দেখানো কঠিন হয়ে পড়ে তাঁদের জন্য। এই প্রেক্ষাপটে তিনি ঘোষণা দেন— “আমি আমার কন্যা তন্দ্রা রানী মোহন্তকে অদ্য তারিখ হইতে ত্যাজ্য কন্যা ঘোষণা করিতেছি। সে আমার পিতা হিসাবে কোনো দাবি করিতে পারিবে না, আমিও তাহাকে কন্যা হিসাবে স্বীকৃতি দিচ্ছি না। তাহার সকল কর্মের দায়ভার সম্পূর্ণভাবে তাহার নিজের। আমি পিতা হিসাবে কোনো দায়িত্ব গ্রহণ করিব না।”
এই ঘোষণা প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেটিজেনদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। অনেকেই শ্রী বিমল চন্দ্র মোহন্তের সিদ্ধান্তকে ধর্ম ও পারিবারিক সম্মান রক্ষায় দৃঢ় অবস্থান হিসেবে স্বাগত জানান। স্থানীয় সমাজসেবকরা মন্তব্য করেন, বর্তমান সমাজে অনেক তরুণ-তরুণী আবেগে পড়ে এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে যা শুধু ধর্ম নয়, পরিবারের মর্যাদাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
তবে ঘটনার পরপরই নতুন তথ্য সামনে আসে। তন্দ্রা রানীর এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু HindusNews-কে জানান, প্রচারিত খবরটি সম্পূর্ণ সত্য নয়। মেয়েটি কোনো বিধর্মী যুবকের সঙ্গে নয়, এক হিন্দু যুবকের সঙ্গেই পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছে। তন্দ্রার প্রণয়ঘটিত সম্পর্ক ছিল লালমনিরহাটেরই অপূর্ব মহন্ত নামে এক যুবকের সঙ্গে। অপূর্ব মহন্তের পিতা জগদীশ চন্দ্র মহন্ত এবং মাতা কামনী রানী মহন্ত। তন্দ্রা ও অপূর্ব দীর্ঘদিন ধরে একে অপরকে ভালোবাসতেন এবং পরিবারকে জানিয়েও সম্পর্কের অনুমোদন চেয়েছিলেন। কিন্তু তন্দ্রার বাবা তার মতামত উপেক্ষা করে অন্যত্র জোরপূর্বক বিয়ে ঠিক করেন এবং আইনি রেজিস্ট্রিও সম্পন্ন করে ফেলেন। এতে ক্ষুব্ধ ও হতাশ হয়ে তন্দ্রা তার পছন্দের ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে যায় এবং দুজনে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়।
তিনি আরও বলেন, “ধর্মান্তরিত হওয়ার কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তারা দুজনেই হিন্দু ধর্মাবলম্বী এবং ভালোবেসে বিয়ে করেছে। বাবা জোর করে অন্যত্র বিয়ে দেওয়ায় তন্দ্রা বাধ্য হয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
এই ঘটনার ফলে একদিকে পারিবারিক সম্মান ও ধর্মীয় মূল্যবোধ রক্ষার দাবি উঠেছে, অন্যদিকে ব্যক্তির স্বাধীনতা ও ভালোবাসার অধিকারের প্রশ্নও নতুন করে সামনে এসেছে। সমাজে এখন চলছে বিতর্ক— সন্তানের জীবনের সিদ্ধান্তে পরিবারের কর্তৃত্ব কতটুকু ন্যায্য, আর কতটুকু অন্যায় হস্তক্ষেপ।
ঘটনাটি এখন লালমনিরহাটজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে। শ্রী বিমল চন্দ্র মোহন্ত কি তাঁর সিদ্ধান্তে অনড় থাকবেন, নাকি মেয়ের প্রকৃত তথ্য প্রকাশের পর অবস্থান পরিবর্তন করবেন— সেটিই এখন সময়ের প্রশ্ন।