
দুই দফায় ধর্ষণের শিকার হিন্দু গৃহবধূ এখন গ্রামছাড়া
আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি:
বরগুনার আমতলীতে দুই দফায় ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক হিন্দু গৃহবধূ (৩৮)। এ ঘটনায় মামলা করে পরিবার নিয়ে তিনি পড়েছেন বিপাকে। আসামিদের পরিবারের হুমকিতে তিনি আশ্রয় নিয়েছেন নিকটাত্মীয়ের বাড়িতে। শিশু-কিশোর বয়সী দুই ছেলে নিয়ে ওই নারীর স্বামীও বাড়িতে যেতে ভয় পাচ্ছেন। শনিবার রাতে ভুক্তভোগী মামলা করলে দুই নম্বর আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সেই আসামিও বুধবার জামিনে ছাড়া পেয়েছে। এ কারণে পরিবারটি নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছে।
আমতলী সদরের প্রায় ৮-১০ কিলোমিটার দূরে হলদিয়া ইউনিয়নের ওই গ্রামটি। বুধবার বিকেলে ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট মাড়িয়ে সেখানে পৌঁছে গৃহবধূর ওপর চালানো নির্যাতনের বিভীষিকাময় বর্ণনা পাওয়া যায়। ভুক্তভোগীর স্বামী পেশায় কৃষক। এ দম্পতির শিশু-কিশোর বয়সী দুটি ছেলে রয়েছে। ওই নারীর ওপর নির্যাতন চালানো যুবকেরা একই গ্রামের বাসিন্দা।
প্রথম দফায় ২৩ অক্টোবর বিকেলে নিজ বাড়িতে ধর্ষণের শিকার হন ওই গৃহবধূ। সেদিন তাঁর স্বামীর সঙ্গে ছেলেরা বাজারে গিয়েছিল। আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া ভুক্তভোগী বলেন, ‘বাড়িতে আমাকে একা পেয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলে সাইফুল ও ইমরান। পরে হত্যার হুমকি দিয়ে নির্যাতন চালায়। তাদের ভয়ে ও লোকলজ্জায় কাউকে এ ঘটনা জানাইনি।’
এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা গেছে, সাইফুল ইসলাম হাওলাদার (২৫) ওই গ্রামেরই নজরুল ইসলাম হাওলাদারের ছেলে। অপর যুবক মো. ইমরান হাওলাদার (৩০) শহিদ হাওলাদারের ছেলে। তারা দুজনই এলাকায় বখাটে হিসেবে পরিচিত। তাদের বিরুদ্ধে নারীঘটিত নানা কেলেঙ্কারির অভিযোগ আছে। তাদের পরিবারের সদস্যরাও খারাপ প্রকৃতির বলে জানিয়েছেন তারা।
সাইফুল ও ইমরানের চরিত্র জানা পাশের গ্রাম পূজাখোলার বাসিন্দাদেরও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে নারীসংশ্লিষ্ট নানা অভিযোগ রয়েছে। কিছুদিন আগেও বরগুনা থেকে এক নারী এনে তারা অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়েছিল। এলাকাবাসী ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলতেও পারে না।
২৩ অক্টোবরের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ওই গৃহবধূর ওপর আরেক দফায় নিপীড়ন চালানো হয় ২৯ অক্টোবর। সেদিন দুপুরে স্বামীর সঙ্গে ওই নারীর দুই ছেলেই ক্ষেতের কাজে যায়। এই সুযোগে সাইফুল ও ইমরান বাড়িতে ঢুকে পড়ে। তারা পালাক্রমে ধর্ষণ করে ওই নারীকে। এবার সেই ধর্ষণের দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করে ইমরানের ছোট ভাই ইমরাজ হাওলাদার (২২)। যাওয়ার সময় তারা হুমকি দিয়ে যায়, কাউকে ঘটনা জানালে ভিডিও ফেসবুকে ছেড়ে দেবে। এমনকি হত্যারও হুমকি দেয়।
কাঁদতে কাঁদতে ওই গৃহবধূ বলেন, ‘আমি এখন বাড়ি যেতে ভয় পাই। ওরা খুব খারাপ লোক। আমি মামলার পর থেকে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি।’
ওই নারী সাইফুল, ইমরান ও ইমরাজের বিরুদ্ধে আমতলী থানায় মামলা করেন ১ নভেম্বর। সেই রাতেই পুলিশ দুই নম্বর আসামি ইমরানকে গ্রেপ্তার করে। ভুক্তভোগীকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে ডাক্তারি পরীক্ষাও করা হয়। মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রাম থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে তিন নম্বর আসামি ও ধর্ষণের ভিডিও ধারণকারী ইমরাজকে। তবে বুধবারই আমতলীর আদালত থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে যায় দুই নম্বর আসামি ইমরান। সে এলাকায় ফিরেই পরিবারের সদস্যদের দিয়ে মামলা তুলে নিতে হুমকি দেওয়াচ্ছে।
নির্যাতনের শিকার নারীর ১৬ বছর বয়সী ছেলের ভাষ্য, ‘মোরা এহন ব্যামালা ডরের মধ্যে আছি।
মোর মার লগে যারা এইরহম খারাপ কাম করছে, হেগো ফাঁসি চাই।’
ভুক্তভোগীর স্বামী বলেন, ‘দুই পোলা লইয়া এহন বাড়িতে থাকতেও ডর লাগে। সাইফুলের মা পিয়ারা বেগম, বউ হামিদা বেগম ও ইমরানের মা বিউটি বেগম মোগো বাড়ি ছাইর্যা যাইতে কয়। ওরা কইছে, তোরা নমোরা (হিন্দু) দ্যাশে থাকতে পারবি না।’
বক্তব্য জানতে বুধবার বিকেলে মামলার আসামি সাইফুল ও ইমরান-ইমরাজের বাড়িতে যান এই প্রতিবেদক। তবে তাদের পরিবারের কোনো সদস্যেরই দেখা মেলেনি। এলাকাবাসীর ভাষ্য, ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর তারা বাড়িতে থাকে না। মাঝেমধ্যে বাড়িতে আসে।
এই মামলাটি তদন্ত করছেন আমতলী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সাইদুল ইসলাম। তিনি বলেন, মামলার পর ইমরান ও ইমরাজকে গ্রেপ্তার করে তারা জেলহাজতে পাঠান। অন্য আসামিকেও গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে। তবে বুধবার ইমরান জামিনে ছাড়া পেয়েছে বলে শুনেছেন।
ওই থানার ওসি দেওয়ান জগলুল হাসান বলেন, আসামিপক্ষের স্বজনেরা ওই পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে বলে তাঁর জানা নেই। এ বিষয়ে তাদের কাছে অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।