
চুয়াডাঙ্গায় জাতীয় হিন্দু মহাজোটের পুনর্মিলনী, শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভায় সংরক্ষিত আসনের দাবি
HindusNews ডেস্ক :
বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার উদ্যোগে শারদীয় দুর্গোৎসব ২০২৫ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে এক বর্ণাঢ্য পুনর্মিলনী, শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা। শুক্রবার সকাল ১১টায় চুয়াডাঙ্গা শহরের শ্রী শ্রী সত্য নারায়ণ মন্দির প্রাঙ্গণে দিনব্যাপী এই আয়োজন ঘিরে উৎসবের আমেজে ভরে ওঠে গোটা শহর। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত ধর্মপ্রাণ মানুষ, সামাজিক ব্যক্তিত্ব, সংগঠক ও শিক্ষানুরাগীদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানটি পরিণত হয় মিলনমেলায়।
শুভসূচনা হয় গীতাপাঠের মাধ্যমে, পাঠ করেন জেলা শাখার আহ্বায়ক স্বপন চক্রবর্তী। পরবর্তীতে অনুষ্ঠিত হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, যা শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পুনরায় মন্দির প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়। অংশগ্রহণকারীদের হাতে দেখা যায় ধর্মীয় পতাকা, ব্যানার ও জাতীয় হিন্দু মহাজোটের দাবিসংবলিত প্ল্যাকার্ড।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব অ্যাডভোকেট ড. গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক। বক্তব্যে তিনি বাংলাদেশের রাজনীতিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের অবস্থান নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন,
“বাংলাদেশের যে-দলই ক্ষমতায় এসেছে, তারা হিন্দু সম্প্রদায়কে কেবল নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে। আমাদের দিয়ে ভোট নেয়, কিন্তু পরে খাঁচায় বন্দী করে রাখে। এখন সময় এসেছে নিজেদের অধিকারের দাবি তুলবার — আমরা আর কারও লেজুড়বৃত্তি করতে চাই না।”
তিনি জাতীয় সংসদে হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত আসনের দাবি জানান, যাতে সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব সংসদে নিশ্চিত হয়।
ড. প্রামাণিক আরও বলেন,
“৫ আগস্টের পর আমরা ভেবেছিলাম নতুন একটি যুগ শুরু হবে— যেখানে সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ দেশের প্রতিটি নাগরিক নির্ভয়ে চলাফেরা করতে পারবে। কিন্তু আজও হামলা, চাঁদাবাজি ও জমি দখলের মতো ঘটনা ঘটছে। তাই সংসদে হিন্দু সম্প্রদায়ের নিজস্ব কণ্ঠস্বর থাকা জরুরি।”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ডা. হেমন্ত কুমার দাস, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট শুভ মজুমদার, চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক কিশোর কুমার কুন্ডু ও বিশিষ্ট শিল্পপতি উমা শংকর আগরওয়ালা।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার আহ্বায়ক স্বপন চক্রবর্তী এবং সঞ্চালনা করেন সদস্য সচিব চির কুমার সাহা (কনক)।
বক্তারা বলেন, শারদীয় দুর্গোৎসব কেবল ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি বাংলাদেশের হাজার বছরের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সম্প্রীতির প্রতীক। তাঁরা সমাজে ভ্রাতৃত্ব, মানবিক মূল্যবোধ ও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রাখার আহ্বান জানান। একইসঙ্গে হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় নিরাপত্তা, সম্পত্তির সুরক্ষা ও উৎসবকালীন নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকা প্রত্যাশা করেন।
অনুষ্ঠানে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত মন্দির কমিটির সভাপতি-সম্পাদক, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সমাজসেবীরা অংশ নেন। আলোচনায় উঠে আসে— হিন্দু সম্প্রদায়ের ন্যায্য অধিকার ও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে আইনি ও সাংবিধানিক উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা।
দিনব্যাপী এই আয়োজনে গীতাপাঠ, ভক্তিগীতি, আলোকসজ্জা ও মিলনমেলার মাধ্যমে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দেন।