
মৌলভীবাজারে কৃষক অবিনাশ বিশ্বাসের ধান কেটে নিলো মনির মিয়া: ছোট ভাইকে মারধর, পরিবার নিরাপত্তাহীনতায়
HindusNews ডেস্ক:
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার নাজিরাবাদ ইউনিয়নের ঘোড়াছাও গ্রামে এক কৃষকের শত কিয়ার জমির ধান জোরপূর্বক কেটে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রতিবেশী মনির মিয়ার বিরুদ্ধে। শুধু ধানই নয়, বিলের মাছ, পানি সেচের নলকূপ, ঠেলাগাড়ি ও সেলো মেশিন পর্যন্ত নিয়ে গেছে অভিযুক্ত ব্যক্তি। এসব ঘটনার প্রতিবাদ করায় কৃষক পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা ও হুমকির ঘটনাও ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
ভুক্তভোগী কৃষক অবিনাশ বিশ্বাস জানান, তাঁর ছোট ভাই অধির বিশ্বাসকে পিটিয়ে আহত করেছে মনির মিয়া (৪৫)। ঘটনাটি ঘটেছে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার নাজিরাবাদ ইউনিয়নের ঘোড়াছাও গ্রামে। অভিযুক্ত মনির মিয়া একই ইউনিয়নের দশকাউনিয়া গ্রামের মৃত খালিক মিয়ার ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অধির বিশ্বাস ও অবিনাশ বিশ্বাসের পরিবারের প্রায় একশ কিয়ার জমিতে আমন ধান চাষ করা হয়েছিল। ধানগুলো পাকতে শুরু করেছে, এমন সময় ভোরে গিয়ে দেখা যায় জমির বেশ কিছু অংশ কেটে নেয়া হয়েছে। পরে গ্রামবাসীর মাধ্যমে জানা যায়, ওই ধান কেটেছে পাশের গ্রামের মনির মিয়া।
গত ৩১ অক্টোবর সকালে অধির বিশ্বাস জমিতে গিয়ে দেখতে পান মনির জোর করে ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছে। বাধা দিলে তাকে মারধর করে তাড়িয়ে দেয় মনির। এ ঘটনায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ জানানো হলেও মনির পরে অবিনাশ বিশ্বাসের বাড়িতে গিয়ে পরিবারকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দেয় বলে অভিযোগ।
অধির বিশ্বাস বলেন, “ধান কাটতে দেখে বাধা দিই। তখন মনির মিয়া আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে মারধর করে তাড়িয়ে দেয়। পরে চেয়ারম্যানের কাছে বিচার চাইলে আমাদের পুরো পরিবারকে হুমকি দেয় সে।”
অবিনাশ বিশ্বাস বলেন, “আমরা নিরীহ মানুষ। জোর করে ধান কেটে উল্টো আমাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। সালিশে যায় না, উল্টো ভয়ভীতি দেখায়। তাই আমরা আইনের আশ্রয় নিয়েছি।”
স্থানীয় কৃষক রবীন্দ্র বিশ্বাস বলেন, “প্রতি রাতেই মনিরের লোকজন ধান কেটে নিয়ে যায়। একদিন আমি দেখে ফেললে আমাকে হুমকি দেয়, যেন কোনো সাক্ষ্য না দিই।”
এই ঘটনায় কৃষক অবিনাশ বিশ্বাস মৌলভীবাজার সদর মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগে মনির মিয়া ও অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় সেনা ক্যাম্প, উপজেলা প্রশাসন ও অন্যান্য সরকারি দফতরেও লিখিত আবেদন দিয়েছেন তিনি।
তবে অভিযুক্ত মনির মিয়ার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
নাজিরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফ উদ্দিন আহমদ বলেন, “ধান কেটে নেওয়ার বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। আমি বিষয়টি জানার পর সালিশের উদ্যোগ নিয়েছি।”
মৌলভীবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী মাহবুবুর রহমান বলেন, “ধান কেটে নেওয়ার অভিযোগ আমরা পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্থানীয় কৃষক সমাজ বলছে, দীর্ঘদিন ধরেই এলাকায় প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি সাধারণ কৃষকদের জমিতে জোরপূর্বক ফসল কেটে নেওয়ার মতো অন্যায় কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এমন ঘটনা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা তাদের।