
হিন্দু থেকে মুসলিম হওয়া সঞ্চিতার বিয়ের দাবিতে ৯ দিন ধরে অনশন, প্রেমিক আলী পলাতক
HindusNews Desk :
পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে এক হৃদয়বিদারক ও বিতর্কিত ঘটনা ঘটেছে। প্রেমের টানে ধর্মান্তরিত হওয়া এক তরুণী এখন বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়ির সামনে টানা নয় দিন ধরে অনশন করছেন। প্রেমিক আলী হাওলাদার বর্তমানে পলাতক, আর অনশনরত তরুণী সঞ্চিতা মণ্ডল এখন সমাজের সহানুভূতি ও আইনের ন্যায্যতার অপেক্ষায়।
ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়নের চর-সাউদখালী আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, স্বরূপকাঠি (নেছারাবাদ) উপজেলার নানদোয়হান গ্রামের নারায়ণ মণ্ডলের মেয়ে সঞ্চিতা মণ্ডল (২৬) প্রায় দুই বছর আগে ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচিত হন ইন্দুরকানী উপজেলার চর-সাউদখালী গ্রামের কবির হাওলাদারের ছেলে আলী হাওলাদার (১৭)-এর সঙ্গে। বন্ধুত্ব থেকে প্রেম, আর প্রেমের টানে তিনি বিয়ের আশ্বাসে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং নিজের নাম পরিবর্তন করে “সায়রা” নাম ধারণ করেন।
সঞ্চিতার অভিযোগ, আলী তাকে ভালোবাসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এক লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় এবং দীর্ঘদিন সম্পর্ক বজায় রাখার পর শারীরিক সম্পর্কেও জড়ায়। কিন্তু পরে পরিবারকে রাজি করাতে না পেরে আলী বিয়েতে অস্বীকৃতি জানায় এবং গোপনে ভারতে পালিয়ে যায়। এরপর থেকে সে সঞ্চিতার সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।
নিরুপায় হয়ে গত ১ নভেম্বর বিকেলে সঞ্চিতা প্রেমিকের বাড়িতে গিয়ে বিয়ের দাবিতে অনশন শুরু করেন। টানা নয় দিন ধরে তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন। এলাকাজুড়ে এই ঘটনাকে ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
অনশনরত সঞ্চিতা বলেন,
> “আমি একটি এনজিওতে চাকরি করি। ফেসবুকে আলীর সঙ্গে পরিচয়ের পর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সে আমাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা নিয়েছে, এমনকি আমি ভারত থেকে তাকে দেশে ফেরানোর জন্য বিকাশে বিশ হাজার টাকা পাঠিয়েছি। এখন সে বিয়ে না করলে আমার জীবনের কোনো মানে থাকবে না। আমি হয় বিয়ে করব, না হয় আত্মহত্যা করব।”
প্রেমিক আলী হাওলাদারের মা রেশমা বেগম বলেন,
> “আমার ছেলে এখন ভারতে আছে, যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। যদি মেয়েটির কথা সত্যি হয়, তাহলে বিষয়টি আমরা বিবেচনা করব।”
এদিকে, ইন্দুরকানী থানার ওসি (তদন্ত) মো. মোস্তফা জাফর বলেন,
> “খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছে। তবে এখনো লিখিত কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এলাকাবাসীর মধ্যে ঘটনাটি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ তরুণীর প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে তার ন্যায্য দাবির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, আবার কেউ মনে করছেন ধর্মান্তরিত হয়ে প্রতারণার শিকার হওয়া সঞ্চিতা সমাজের জন্য এক করুণ সতর্কবার্তা।
প্রেম, ধর্মান্তর ও প্রতারণার এই ঘটনাটি এখন সামাজিক ও প্রশাসনিক আলোচনার কেন্দ্রে। টানা নয় দিন অনশনরত এই তরুণী একদিকে মানবিক সহায়তার অপেক্ষায়, অন্যদিকে ন্যায়বিচারের প্রত্যাশায় দিন কাটাচ্ছেন প্রেমিকের বাড়ির উঠোনেই।