
কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় হিন্দু গৃহবধূর হাতের আংটি, নাকফুল ও বদনা নিয়ে গেল এনজিও!
HindusNews ডেস্ক :
বাগেরহাটের চিতলমারীতে কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় এক গৃহবধূর হাতের স্বর্ণের আংটি, নাকফুল ও পিতলের বদনা নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে একটি বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) কর্মীদের বিরুদ্ধে। ঘটনায় পুরো এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়।
অভিযোগ অনুযায়ী, ভুক্তভোগী শ্রাবণী হীরা (২২) নামের ওই গৃহবধূ স্থানীয় “ডাম ফাউন্ডেশন ফর ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট” (DFED) নামের এনজিও থেকে ৪০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। চুক্তি অনুযায়ী, লাভসহ ফেরত দিতে হতো ৪৫ হাজার ১২০ টাকা। কয়েকটি কিস্তি পরিশোধের পর তার স্বামী রিপন কর্মসূত্রে বাইরে চলে গেলে কিছু কিস্তি বাকি পড়ে যায়।
গত ২৯ অক্টোবর সকাল ১০টার দিকে এনজিওর কর্মীরা শ্রাবণীকে তার নিজ বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। তিনি অভিযোগ করেন, অফিসে নিয়ে তাকে ও তার তিন বছরের মেয়েকে একটি ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। পরে বিকেলে ফিল্ড কর্মীরা এসে তাকে দুইটি ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে হাতের স্বর্ণের আংটি, নাকফুল ও পিতলের বদনা জোরপূর্বক নিয়ে যায়।
শ্রাবণী হীরা বলেন,
“আমাকে ঘরে বন্ধ করে ভয় দেখানো হয়। আমার ছোট মেয়ে ক্ষুধায় কাঁদছিল, কিন্তু কিছু বলার সাহস পাইনি। পরে দেখি পাশ বইয়ে তারা ‘আংটি বাবদ ৮ হাজার টাকা’ ও ‘বদনা বাবদ ১ হাজার ৫০০ টাকা’ লিখে রেখেছে।”
ঘটনার পর ওই গৃহবধূর কান্নাজড়িত বক্তব্যসহ ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়। স্থানীয়দের অনেকে এনজিওর এই আচরণের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, “এটা মানবিকতা নয়, নিছক নির্যাতন।”
অন্যদিকে, এনজিও কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অস্বীকার করেছে।
ডিএফইডি চিতলমারী শাখার ম্যানেজার বাসুদেব দেবনাথ বলেন,
“গৃহবধূ শ্রাবণী কিস্তি খেলাপি ছিলেন। তার কাছ থেকে নাকফুল নেওয়ার বিষয়টি শুনেছি। ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হবে। আমরা জোর করে কিছু নেইনি, তিনি নিজ ইচ্ছায় কিছু দিয়েছিলেন।”
তবে শ্রাবণীর পরিবার দাবি করেছে, এটি ছিল নিপীড়ন ও ভয়ভীতির ফল। তারা বিষয়টি প্রশাসনের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবেন বলে জানিয়েছেন।
চিতলমারীর সাধারণ মানুষ বলছেন, এনজিওর কিস্তির চাপ দিন দিন অসহনীয় হয়ে উঠছে। বিশেষ করে দরিদ্র নারীদের ওপর এমন মানসিক ও আর্থিক নির্যাতন থামাতে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।