
কুমিল্লায় ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে এক হিন্দু নারী গ্রেফতার! হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্বেগ:
HindusNews ডেস্ক :
কুমিল্লায় সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ইসলাম ধর্ম এবং মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কথিত কটূক্তির অভিযোগে তৃষা দাস নামের এক নারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যা স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে গভীর উদ্বেগ ও আশঙ্কার জন্ম দিয়েছে। এই ঘটনাটি শুধু ধর্মীয় বিতর্কই নয়, বরং কুমিল্লা অঞ্চলের সামাজিক সম্প্রীতি এবং সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।
পুলিশের সূত্রে জানা গেছে, তৃষা দাস দীর্ঘদিন ধরে "তৃষা চৌধুরী" নামে একটি ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে ইসলাম ধর্ম এবং নবী করিম (সা.)-কে লক্ষ্য করে অবমাননাকর মন্তব্য ও ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর কাজে জড়িত ছিলেন। তার এসব পোস্ট স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের নজরে আসার পর থেকেই এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি দ্রুত খারাপের দিকে মোড় নেওয়ার আগেই "Protect Our Sisters" নামক একটি স্থানীয় সংগঠন এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে। তারা ঘটনাটি নিবিড়ভাবে তদন্ত করে এবং সংগৃহীত প্রমাণাদি সহকারে স্থানীয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
এই সংগঠনের পক্ষ থেকে হেফাজতে ইসলাম কুমিল্লা মহানগর সভাপতি মুফতি শামসুল ইসলাম জিলানি অভিযুক্ত তৃষা দাসের উগ্রতা এবং তার স্বীকারোক্তির প্রমাণ নিয়ে সরাসরি কুমিল্লা জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপার (এসপি)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে, জেলা প্রশাসক ও এসপি-এর নির্দেশে কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মহিনুল ইসলাম একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেন। "Protect Our Sisters" ইউ-এর সদস্যদের সক্রিয় সহায়তায় পুলিশ তৃষা দাসকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে। গ্রেফতারের সময় তৃষা দাসের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি থেকে ইসলাম ধর্ম অবমাননার বেশ কিছু আলামত উদ্ধার করা হয়, যদিও তিনি এসব প্রমাণ নষ্ট করার চেষ্টা করেছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। ফোনটি বর্তমানে ফরেনসিক তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
ঘটনার পর থেকে স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং উলামা সমাজের সক্রিয় তৎপরতায় এলাকার পরিস্থিতি আপাতত শান্ত রয়েছে। তৃষা দাসের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১৫৩, ২৯৫ এবং ২৯৮ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মহিনুল ইসলাম দৃঢ়ভাবে জানিয়েছেন যে, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের মতো যেকোনো কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই ঘটনা স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে এক মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। অনেকেই এই ঘটনাকে ব্যক্তিগত বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখছেন এবং বিশ্বাস করেন যে, এর জন্য সমগ্র হিন্দু সম্প্রদায়কে দায়ী করা উচিত নয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্থানীয় হিন্দু নেতা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, "আমরা এই ধরনের কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই। কোনো ধর্মকে অবমাননা করা কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়। তবে আমরা আন্তরিকভাবে আশা করি, এই ঘটনার প্রেক্ষিতে যেন হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর কোনো ধরনের নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে এবং আমাদের উপর কোনো অন্যায় আরোপ না করা হয়।"
অপর একজন স্থানীয় হিন্দু শিক্ষক এই বিষয়ে মন্তব্য করেন, "আমরা মনে করি, যেকোনো ধরনের উস্কানিমূলক পোস্ট সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট করে এবং সমাজে বিভেদ তৈরি করে। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে, তবে আমরা সকল ধর্মের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সহাবস্থান এবং শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখার জন্য সমাজের সকল স্তরের মানুষের প্রতি আহ্বান জানাই।"
তৃষা দাসের গ্রেফতারের ঘটনাকে ঘিরে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকেই নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের আশঙ্কা, এই ধরনের সংবেদনশীল ঘটনা কিছু দুষ্কৃতকারীকে সুযোগ করে দিতে পারে, যারা সংখ্যালঘুদের উপর হামলা বা হয়রানি করতে পারে। এই পরিস্থিতিতে তারা প্রশাসনের কাছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন। এই পুরো পরিস্থিতি একটি শান্তিপূর্ণ ও সহনশীল সমাজ গঠনে সকল সম্প্রদায়ের মানুষের দায়িত্ব এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার গুরুত্বের উপর গভীরভাবে আলোকপাত করে।