
দিল্লিতে ‘ঘাতক’ গাড়িতে ছিলেন কাশ্মীরি চিকিৎসক উমর? যোগ রয়েছে কি ফরিদাবাদকাণ্ডের? খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা
দিল্লি:
দিল্লিতে লালকেল্লার কাছে গাড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও জোরালো হচ্ছে জঙ্গিযোগের তত্ত্ব। ফরিদাবাদে বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনার সঙ্গে লালকেল্লার কাছে বিস্ফোরণের যোগ রয়েছে কি না, তা নিয়েও উদ্বেগ দানা বাঁধতে শুরু করেছে দেশবাসীর মনে। এরই মধ্যে বিভিন্ন সূত্র মারফত উঠে আসছে জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামার এক চিকিৎসকের নাম। সংবাদমাধ্যমের একাংশে দাবি করা হচ্ছে, সিসি ক্যামেরায় প্রকাশ্যে আসা ফুটেজে দেখা গিয়েছে ওই চিকিৎসককেই। যদিও দিল্লি পুলিশ বা অন্য কোনও তদন্তকারী সংস্থা এ বিষয়ে সরকারি ভাবে কোনও মন্তব্য এখনও পর্যন্ত করেনি।
সোমবার সন্ধ্যার যে গাড়িটিতে বিস্ফোরণ হয়েছে, সেটির নম্বর প্লেট হরিয়ানার। সেই সূত্র ধরে জনৈক মহম্মদ সলমন নামে এক ব্যক্তিকে সোমবার রাতেই আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ। বিস্ফোরণে উড়ে যাওয়া গাড়িটি তাঁরই নামে রেজিস্ট্রেশন করা আছে বলে দাবি পুলিশ সূত্রের। যদিও জানা যাচ্ছে, পুলিশি জেরায় সলমন জানিয়েছেন, তিনি গাড়িটি পুলওয়ামার এক বাসিন্দাকে বিক্রি করে দিয়েছিলেন। তবে গাড়ির নথিপত্রে এখনও নামবদল হয়নি। এ বার সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে দাবি করা হচ্ছে, ওই গাড়িটির বর্তমান ‘মালিক’ ছিলেন পুলওয়ামার এক চিকিৎসক। নাম ওমর মহম্মদ।
বিস্ফোরণের পরে আশপাশের এলাকার বিভিন্ন সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখতে শুরু করেছেন তদন্তকারীরা। সিসি ক্যামেরার একটি ফুটেজ ইতিমধ্যে প্রকাশ্যে এসেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় তিন ঘণ্টা লালকেল্লার কাছে একটি পার্কিংয়ে দাঁড়িয়ে ছিল গাড়িটি। গাড়িটিতে নীল-কালো রঙের টি-শার্ট পরা এক ব্যক্তিকে দেখা গিয়েছে ফুটেজে। এনডিটিভি-র এক প্রতিবেদনে দাবি করা হচ্ছে, ওই ব্যক্তিই চিকিৎসক ওমর। ফরিদাবাদকাণ্ডে গ্রেফতার দুই চিকিৎসক মুজাম্মিল শাকিল ও আদিল রাথারের সঙ্গেও তাঁর যোগ ছিল বলে দাবি করা হচ্ছে ওই প্রতিবেদনে। তাতে বলা হচ্ছে, দুই সহযোগীর গ্রেফতারির পরেই ঘাবড়ে গিয়েছিলেন ওমর। মুজাম্মিল এবং আদিলের গ্রেফতারির পরে তিনি ভয়ে ফরিদাবাদ থেকে পালিয়ে এসেছিলেন। ঘাবড়ে গিয়েই ওই চিকিৎসক এই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে দাবি সূত্রের।
দিল্লি পুলিশের স্পেশ্যাল সেল সূত্রে সংবাদমাধ্যম ‘দৈনিক ভাস্কর’-ও জানাচ্ছে সাদা রঙের ওই ‘হুন্ডাই আই২০’ গাড়িতে ওমরই বসে ছিলেন। গাড়িটি প্রায় তিন ঘণ্টা লালকেল্লার কাছে এক পার্কিংয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। ওই সময়ে তাঁকে এক বারও গাড়ি থেকে নামতে দেখা যায়নি বলে পুলিশের ওই সূত্রের দাবি। যদিও পুলিশের তরফে এখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।
সোমবারের গাড়ি বিস্ফোরণের পরে পাহাড়গঞ্জ, দরিয়াগঞ্জ এবং আশপাশের এলাকার হোটেলগুলিতে রাতভর তল্লাশি চালিয়েছে দিল্লি পুলিশ। খতিয়ে দেখা হয়েছে বিভিন্ন হোটেলের রেজিস্টার খাতা। সোমবার সকালে দিল্লি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (উত্তর) রাজা বান্থিয়া বলেন, “কোতোয়ালি থানায় এফআইআর দায়ের হয়েছে। ইউএপিএ, বিস্ফোরক আইনের ধারা-সহ ভারতীয় ন্যায় সংহিতার উপযুক্ত ধারা যুক্ত করা হয়েছে। এনএসজি, দিল্লি পুলিশ এবং ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ দল ঘটনাস্থলে রয়েছে। যে গাড়িতে বিস্ফোরণ হয়েছে, তাতে কিছু দেহাংশ পাওয়া গিয়েছে। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা সেগুলি সংগ্রহ করেছেন। আমরা এখনই চূড়ান্ত ভাবে কিছু বলতে পারছি না। তদন্ত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।”
সংক্ষেপে
দিল্লির দমকলের এক আধিকারিক জানান, একটি গাড়িতে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গিয়েছে। বিস্ফোরণের পরই আগুন ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের কয়েকটি গাড়িতেও। বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটে সন্ধ্যা ৬টা ৫২ মিনিটে। দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছোয় দমকলের একাধিক ইঞ্জিন। দমকল সূত্রে দাবি, কিছু ক্ষণের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।
দিল্লিতে বিস্ফোরণ। লালকেল্লার কাছে গাড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটল। সেই বিস্ফোরণের কারণে লালকেল্লা মেট্রো গেটে আগুন লেগে যায়। আগুন ছড়িয়ে পড়ে আরও কয়েকটি গাড়িতে। ২৯০০ কেজি বিস্ফোরক উদ্ধারের পরই এই ঘটনায় নাশকতা নিয়ে সন্দেহ ঘনাচ্ছে। যদিও কী কারণে বিস্ফোরণ ঘটল, তা এখনও স্পষ্ট নয়।