
মেয়ে বিয়ে না দেওয়ায় শিক্ষক খুন: তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড
সিলেট;
সিলেটের বিয়ানীবাজারের চাঞ্চল্যকর শিক্ষক বিনয়ান্দ্র ভূষণ চক্রবর্তী হত্যা মামলার তিন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছেন বিজ্ঞ আদালত।
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) বিকালে সিলেট দ্রুত ট্রাইব্যুনালের বিচারক স্বপন কুমার সরকার রায় প্রদানকালে তিন আসামির দুইজন কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় আদালত রায়ের পর্যালোচনায় এ হত্যাকাণ্ডটিকে আসামিদের ঠান্ডা মাথায় সুপরিকল্পনা ও সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হিসাবে উল্লেখ করেন।
প্রায় ৭ বছর একই বিচারকের আদালতে ১৪ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ এবং মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জয় লাল নাথের স্বীকারোক্তি, স্ত্রী ও মেয়ের কাছে নিহত শিক্ষক বিনয়ান্দ্র ভূষণ চক্রবর্তীর ঘটনার বর্ণণা এবং দুই পরিবারের বিরোধের বিষয়টি দীর্ঘ সময় ধরে পর্যালোচনা করে আদালত রায় প্রদান করেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন কানাডা প্রবাসী শিক্ষক বিনয়ান্দ্র ভূষণ চক্রবর্তী হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ওয়াসিম রাজা ও তার সহযোগী দুলাল আহমদ বাবর।
আদালতের কাঠগড়ায় থাকা দুই আসামি বাবর ও জয় লাল নাথ এসময় কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাদের স্বজনদেরও কাঁদতে দেখা যায়।
জানা যায়, সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার লাউতা ইউনিয়নের জলঢুপ এলাকায় ২০১৮ সালের ৩০ নভেম্বর রাত ৮টার দিকে আসামীরা শিক্ষক বিনয়ান্দ্র ভূষণ চক্রবর্তীকে ঘর থেকে ডেকে বের করে হত্যার উদ্দেশ্যে অগ্নিদগ্ধ করে। আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পরে সিলেট ও উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হয়।
ঘটনার ছয়দিন পর ঢাকার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৬ ডিসেম্বর তিনি মারা যান। এ ঘটনায় বিয়ানীবাজার থানায় দায়ের করা হত্যা মামলার চার্টশিটভূক্ত তিন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন আদালত।
শিক্ষক বিনয়ান্দ্র ভূষণ চক্রবর্তীর মেয়ে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ শর্মিলা চক্রবর্তী বলেন, দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর পর পিতা হত্যা মামলায় জড়িত তিন আসামিকে আদালত মৃত্যুদণ্ড প্রদান করায় আমরা সন্তুষ্ট। আমাদের চাওয়া, রাষ্ট্র যেন দ্রুত এ রায় কার্যকর করে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এক আসামি দেশের বাইরে অবস্থান করছে। তাকেও দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি প্রদান করতে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবুল হোসেন বলেন, তারা যে অপরাধ করেছেন এ রায় সে অপরাধের প্রকৃত শাস্তি। ভিকটিমের পরিবার ন্যায়বিচার পেয়েছে, আমরা সবাই এ রায়ে সন্তুষ্ট। দেশের বাইরে থাকা এক আসামি, যে এ হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী, সরকার তাকে দেশে এনে রায় কার্যকর করবে বলে আশা করছি।
আসামি পক্ষের আইনজীবী মো. ইকবাল হোসেন বলেন, আদালতের রায়ে আমরা অসন্তুষ্ট। আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। প্রসিকিউশন সন্দেহাতীতভাবে এই মামলা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। মহামান্য হাইকোর্টে ন্যায়বিচারের স্বার্থে আমরা দ্রুত আপিল করব।
উল্লেখ্য, ডাঃ শর্মিলা চক্রবর্তীকে কথিত স্ত্রী দাবি করে পরিবারের কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেন ওয়াসিম রাজা। ধর্মীয় বিষয়টি বিবেচনা করে এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় তিনি দেশের বাইরে থেকেই সহযোগীদের দিয়ে শিক্ষক বিনয়ান্দ্র ভূষণ চক্রবর্তীকে হত্যা করান।