

২২ জনকে হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি নিয়োগ, নেই একজনও হিন্দু বিচারপতি
ঢাকা প্রতিনিধি :
জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানের পর নিয়োগ পাওয়া হাইকোর্ট বিভাগের ২২ জন অতিরিক্ত বিচারপতিকে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। আজ (মঙ্গলবার) রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
তবে এবারও সেই নিয়োগ তালিকায় একজনও হিন্দু বিচারপতির নাম নেই — যা বিচার বিভাগে ধর্মীয় ভারসাম্য ও প্রতিনিধিত্ব নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, “মহামান্য রাষ্ট্রপতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুসারে, প্রধান বিচারপতির পরামর্শক্রমে নিম্নবর্ণিত ২২ জন অতিরিক্ত বিচারককে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক হিসেবে নিয়োগদান করেছেন।”
স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্তরা হলেন—
বিচারপতি মোঃ গোলাম মর্তুজা মজুমদার, বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেন, বিচারপতি মোঃ মনসুর আলম, বিচারপতি সৈয়দ জাহেদ মনসুর, বিচারপতি কে এম রাশেদুজ্জামান রাজা, বিচারপতি মোঃ যাবিদ হোসেন, বিচারপতি মুবিনা আসাফ, বিচারপতি কাজী ওয়ালিউল ইসলাম, বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকা, বিচারপতি মোঃ আবদুল মান্নান, বিচারপতি তামান্না রহমান খালিদী, বিচারপতি মোঃ শফিউল আলম মাহমুদ, বিচারপতি মোঃ হামিদুর রহমান, বিচারপতি নাসরিন আক্তার, বিচারপতি সাথীকা হোসেন, বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তাজরুল হোসেন, বিচারপতি মোঃ তৌফিক ইনাম, বিচারপতি ইউসুফ আব্দুল্লাহ সুমন, বিচারপতি শেখ তাহসিন আলী, বিচারপতি ফয়েজ আহমেদ, বিচারপতি মোঃ সগীর হোসেন এবং বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজী।
উল্লেখ্য, গত বছর ২০২৪ সালের ৯ অক্টোবর সরকার ২৩ জনকে হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল। তাদের মধ্যে ছিলেন বিএনপি নেতা নিতাই রায় চৌধুরীর ছেলে দেবাশীষ রায় চৌধুরী, যিনি একমাত্র হিন্দু বিচারপতি হিসেবে তালিকায় স্থান পেয়েছিলেন। কিন্তু এবার স্থায়ী নিয়োগের তালিকায় তার নাম বাদ পড়ে গেছে।
আইনজীবী ও আদালত সংশ্লিষ্ট অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন— বিচার বিভাগে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে। তারা মনে করেন, দেশের সংবিধানে নাগরিকের ধর্ম নির্বিশেষে সমান সুযোগের কথা বলা হলেও বাস্তবে বিচার বিভাগের শীর্ষ পর্যায়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ আশঙ্কাজনকভাবে কমছে।
একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বলেন, “বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় মেধাবী হিন্দু আইনজীবীর সংখ্যা অনেক। তবু তারা যখন নিয়মিতভাবে বিচারপতি নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হন, তখন তা কেবল ব্যক্তি নয়, গোটা বিচার ব্যবস্থার ভারসাম্যকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে।”
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দেশের বিচারব্যবস্থায় ধর্মীয় ও সামাজিক বৈচিত্র্য রক্ষা করা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ন্যূনতম দায়িত্ব। কিন্তু সাম্প্রতিক নিয়োগে সেই ভারসাম্যের অভাব স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।