
প্রায় চার হাজার শিশুর হার্টে সার্জারির খরচ দিয়ে গিনেস বুকে ভারতীয় সঙ্গীতশিল্পী পলক মুচ্ছল
HindusNews ডেস্ক :
বলিউডের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী পলক মুচ্ছল আবারও প্রমাণ করলেন— সুর শুধু বিনোদনের জন্য নয়, এটি মানবতার সেবার এক অনন্য মাধ্যমও হতে পারে। গানের আয়ে প্রায় চার হাজার শিশুর হৃদযন্ত্রের অস্ত্রোপচারের খরচ বহন করে তিনি নতুন জীবন দিয়েছেন অসংখ্য পরিবারকে। আর এই মানবিক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সম্প্রতি তার নাম উঠেছে বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’ এবং ‘লিমকা বুক অব রেকর্ডস’-এ।
ভারতের মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে জন্ম নেওয়া পলক মুচ্ছল ছোটবেলা থেকেই সেবামূলক কাজে যুক্ত ছিলেন। বয়স তখন মাত্র সাত–আট বছর, যখন তিনি প্রথম রাস্তায় গান গেয়ে কার্গিল যুদ্ধে আহত সৈন্যদের চিকিৎসার জন্য ২৫ হাজার টাকা তুলেছিলেন। সেই ছোট্ট বয়স থেকেই মানুষের কষ্ট তার মনে নাড়া দিয়েছিল। ওড়িশার ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্যও নিজের সঞ্চয় থেকে সাহায্য পাঠান তিনি। এরপর এক স্কুলছাত্রীর হার্ট সার্জারির জন্য ৫১ হাজার টাকা সংগ্রহ করেন পলক। তার এই মানবিক উদ্যোগে অনুপ্রাণিত হয়ে ভারতের খ্যাতনামা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ দেবী শেঠি শিশুটির অস্ত্রোপচারটি বিনামূল্যে করেন। সেখান থেকেই শুরু হয় পলকের মানবতার যাত্রা, যার নাম পরে দেওয়া হয় ‘পলক পলাশ চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশন’।
২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে এতদিনে প্রায় ৩,৮০০ শিশুর হার্ট সার্জারি সম্পন্ন হয়েছে। সংগঠনের সমস্ত অর্থ আসে তার কনসার্ট ও সঙ্গীত পরিবেশনা থেকে। প্রতিটি কনসার্টের উদ্দেশ্য থাকে একটি শিশুর জীবন রক্ষা করা। পলকের ভাষায়, “আমার প্রতিটি গান, প্রতিটি সুরের পেছনে আছে একেকটি শিশুর হাসি। যেসব বাবা-মা তাদের সন্তানের চিকিৎসার খরচ বহন করতে পারেন না, আমি চাই তাদের পাশে দাঁড়াতে।”
পলকের এ যাত্রা শুরু হয়েছিল খুব ছোট পরিসরে। কিন্তু তার নিষ্ঠা ও সহানুভূতির কারণে এখন এটি এক বিশাল মানবসেবামূলক অভিযানে রূপ নিয়েছে। বহু বছরের নিরলস পরিশ্রম ও মানবিক কাজের ফলস্বরূপ আজ তার নাম উঠেছে গিনেস বুকে। মানবতার এই বিরল অর্জনের জন্য তিনি হয়েছেন প্রথম কোনো বলিউড গায়িকা যিনি কেবল মানবসেবার জন্য গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের মর্যাদা পেয়েছেন।
এই খবর প্রকাশের পর থেকেই পলক মুচ্ছলকে শুভেচ্ছায় ভাসাচ্ছেন ভক্তরা, সহকর্মীরা এবং সামাজিক মাধ্যমের অসংখ্য মানুষ। তার নীরব মানবিক কর্মে যে আলো ছড়িয়েছে, তা আজ সারা বিশ্বে এক অনন্য উদাহরণ হয়ে উঠেছে। পলকের এই অর্জন প্রমাণ করে, সঙ্গীত শুধু হৃদয় ছুঁতে পারে না, বরং হৃদয়ও বাঁচাতে পারে।