
চট্টগ্রাম বিভাগকে নিয়ে গ্রেটার ত্রিপুরা ল্যান্ডের মানচিত্র প্রকাশ করলেন ত্রিপুরা রাজা প্রদ্যুৎ বিক্রম দেববর্মা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজপরিবারের উত্তরাধিকারী ও ত্রিপুরা মোথা পার্টির চেয়ারম্যান প্রদ্যুৎ বিক্রম মানিক্য দেববর্মা (যিনি ‘বুবাগ্রা’ নামে পরিচিত) এবার বাংলাদেশকে ঘিরে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক প্রোফাইলে তিনি এক "গ্রেটার ত্রিপুরা ল্যান্ড" নামের মানচিত্র প্রকাশ করেন, যেখানে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের পাশাপাশি কুমিল্লা বিভাগের একাধিক জেলা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
প্রদ্যুৎ বিক্রম দেববর্মা প্রকাশিত মানচিত্রে বাংলাদেশের মোট ১১টি জেলা— চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালি, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া—কে তথাকথিত “গ্রেটার ত্রিপুরা ল্যান্ড”-এর অন্তর্ভুক্ত দেখানো হয়েছে।
তার এই পদক্ষেপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে, যেখানে অনেকেই এটিকে বাংলাদেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতার ওপর সরাসরি হুমকি হিসেবে দেখছেন।
ফেসবুক পোস্টে দেববর্মা লিখেছেন—
“দিল্লি বিস্ফোরণের পরের ঘটনাগুলো দেখিয়ে দিচ্ছে, পাকিস্তানের আইএসআই এখন ভারতের হতাশাগ্রস্ত তরুণদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়াতে চাচ্ছে। আমার বিশ্বাসযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও ঢাকায় পাকিস্তানি জেনারেল এবং ব্রিগেডিয়ারদের উপস্থিতি রয়েছে। তারা তরুণদের ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্ররোচিত করছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের অঞ্চলের সংখ্যালঘুদের কেবল সুরক্ষিত করাই নয়, বরং তাদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করাও জরুরি। রাজনীতি যেন কখনো জাতীয় স্বার্থের বাইরে না যায়।”
প্রদ্যুৎ দেববর্মা বিগত কয়েক মাস ধরেই ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ও রাজনৈতিক সভায় প্রকাশ্যে দাবি করে আসছেন যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয় জনগোষ্ঠী নৃতাত্ত্বিকভাবে ত্রিপুরার জনগণের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ। তার ভাষ্যমতে, পাহাড়ের আদিবাসীরা নাকি তাকে “পার্বত্য চট্টগ্রাম দখল করে গ্রেটার ত্রিপুরা ল্যান্ড প্রতিষ্ঠা করার আহ্বান জানিয়েছে।”
ভারতীয় এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন—
“চট্টগ্রাম বন্দর ছাড়া উত্তর-পূর্ব ভারতের অস্তিত্ব নেই। ভারত সরকার যদি আমাকে অনুমতি দেয়, আমি দুই মিনিটেই চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত পৌঁছে যাব।”
বাংলাদেশের কূটনৈতিক মহলে ইতোমধ্যে এই বিষয়টি গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের একটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের নেতার এই ধরনের বক্তব্য প্রতিবেশী দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রকাশের শামিল।
তারা মনে করছেন, ভারত সরকারকে অবিলম্বে ত্রিপুরা রাজাকে এই ধরনের বিভাজনমূলক বক্তব্য থেকে বিরত রাখার উদ্যোগ নিতে হবে, নচেৎ এই ইস্যু সীমান্ত অঞ্চলে নতুন উত্তেজনা তৈরি করতে পারে।
উল্লেখ্য, প্রদ্যুৎ বিক্রম দেববর্মা ভারতের রাজা বীর বিক্রম কিশোর দেববর্মার বংশধর এবং বর্তমানে ত্রিপুরার অন্যতম প্রভাবশালী রাজনীতিক।