
হিন্দুদের মৃত্যুর পর কেন পোড়ানো হয়? জানুন সনাতন ধর্মের আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা
HindusNews ডেস্ক:
মানুষের জন্ম যেমন এক অনিবার্য সত্য, তেমনি মৃত্যু-ও জীবনের চূড়ান্ত গন্তব্য। কিন্তু মৃত্যুর পর দেহের কী হয়—এই প্রশ্নের উত্তর বিভিন্ন ধর্মে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সনাতন ধর্মে মৃত্যুর পর মৃতদেহ পোড়ানোর প্রথা হাজার বছরের পুরোনো। এই প্রথার আধ্যাত্মিক, বৈজ্ঞানিক ও সামাজিক—তিনটি দিকই রয়েছে, যা আজও গভীরভাবে পালন করে আসছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।
সনাতন দর্শনে বিশ্বাস করা হয়, মানুষের প্রকৃত অস্তিত্ব তার আত্মা। দেহ কেবলমাত্র এক অস্থায়ী আবরণ, যা জন্মের সময় আত্মাকে আশ্রয় দেয় এবং মৃত্যুর পর ত্যাগ করা হয়। তাই মৃতদেহ পোড়ানোকে আত্মার মুক্তির একটি পবিত্র পথ হিসেবে দেখা হয়। অগ্নিতে দেহ সমর্পণ মানে হলো দেহের সমস্ত বস্তুগত বন্ধন থেকে আত্মার মুক্তি। এই বিশ্বাস থেকেই জন্ম নিয়েছে “অগ্নিদাহ” বা শবদাহ প্রথা।
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে আগুনকে সনাতন ধর্মে পবিত্র ও দেবতুল্য হিসেবে গণ্য করা হয়। অগ্নিদেবকে দেবতাদের পুরোহিত বলা হয়, যিনি মানুষ ও দেবতার মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেন। মৃত্যুর পর দেহকে অগ্নিদেবের হাতে অর্পণ করা মানে হলো আত্মাকে দেবলোকে প্রেরণ করা—যেখানে সে তার কর্মফল অনুযায়ী নতুন যাত্রা শুরু করবে।
অন্যদিকে, এই প্রথার একটি বৈজ্ঞানিক কারণও আছে। মৃতদেহ পচে গেলে তা থেকে বিভিন্ন রোগজীবাণু ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে। অগ্নিদাহের মাধ্যমে অত্যন্ত উচ্চ তাপমাত্রায় সেই জীবাণুগুলো সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়, যা পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ। পাশাপাশি এটি মৃতদেহ নিষ্পত্তির একটি দ্রুত ও পরিচ্ছন্ন উপায়—যা প্রাকৃতিক পচনের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর।
শবদাহ শেষে দেহের ছাই নদী বা পবিত্র জলাশয়ে বিসর্জন দেওয়ার প্রথাও গভীর অর্থ বহন করে। এটি প্রকৃতির পাঁচটি মৌলিক উপাদান—মাটি, জল, বায়ু, আগুন ও আকাশ—এর কাছে দেহের প্রত্যাবর্তনের প্রতীক। সনাতন ধর্মে বিশ্বাস করা হয়, জীবনের উৎস যেমন প্রকৃতি, মৃত্যুর পর দেহও সেই প্রকৃতিতেই ফিরে যায়।
ফলে বলা যায়, মৃতদেহ পোড়ানোর এই প্রথা কেবল একটি ধর্মীয় রীতি নয়; এটি আত্মা, প্রকৃতি ও ব্রহ্মাণ্ডের চিরন্তন সম্পর্কের প্রতীক। সনাতন ধর্মের এই দৃষ্টিভঙ্গি মৃত্যুকে ভয় নয়, বরং আত্মার পরম যাত্রার সূচনা হিসেবে দেখতে শেখায়।