
সংসদ নির্বাচনের দিনেই গণভোট অনুষ্ঠিত হবে: প্রধান উপদেষ্টা
ঢাকা প্রতিনিধি :
জাতির উদ্দেশে দেয়া এক গুরুত্বপূর্ণ ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঘোষণা দিয়েছেন যে, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিতব্য ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। বৃহস্পতিবার দুপুরে দেয়া এই ভাষণে তিনি বলেন, “আমরা সব দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোটের আয়োজন করা হবে। এতে নির্বাচনী ব্যয় সাশ্রয় হবে, প্রশাসনিক জটিলতা কমবে এবং সংস্কার প্রক্রিয়া আরও অংশগ্রহণমূলক হবে।”
তিনি আরও জানান, গণভোটের জন্য প্রয়োজনীয় আইন যথাসময়ে প্রণয়ন করা হবে। এতে সংস্কারের লক্ষ্য কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত হবে না বরং এটি হবে গণতন্ত্রের শক্ত ভিত্তির সূচনা।
প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে গণভোটে উপস্থাপনীয় প্রশ্নটিও জনগণের সামনে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং জুলাই সনদে লিপিবদ্ধ সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো নিয়ে একটি প্রশ্ন থাকবে। ভোটাররা সেখানে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ দিয়ে মতামত জানাবেন।” তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে নির্বাচনকালীন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নির্বাচন কমিশন গঠন, দুই কক্ষবিশিষ্ট সংসদ ব্যবস্থা প্রবর্তন, নারীর প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার ও সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিতকরণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার মতো বিষয়।
অধ্যাপক ইউনূস জানান, গণভোটে যদি সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট ‘হ্যাঁ’ হয়, তাহলে আগামী সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সদস্যদের নিয়েই একটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন করা হবে। এই পরিষদ প্রথম অধিবেশন শুরুর পর ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে সংবিধান সংস্কার সম্পন্ন করবে। সংস্কার কার্যক্রম শেষ হলে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ সদস্য বিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠন করা হবে, যার মেয়াদ নিম্নকক্ষের মেয়াদের সঙ্গে সমান থাকবে।
তিনি আরও বলেন, “এই গণভোট হবে জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। এটি গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করবে এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত। এতে জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে এবং রাজনৈতিক দলগুলো বাধ্যতামূলকভাবে সংস্কার প্রক্রিয়ায় যুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।