
কোটালীপাড়ায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় পা হারিয়ে জীবনের সাথে যুদ্ধ করছে কিশোরী দীঘা মল্লিক!
নিজস্ব প্রতিবেদক,HindusNews :
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার পশ্চিম পীরারবাড়ি গ্রামের এক মেধাবী কিশোরী আজ জীবনযুদ্ধের নির্মম বাস্তবতায় লড়ছে। দুর্গাপূজার আনন্দমুখর সময়ে ঘটে যাওয়া এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা তার শৈশব ও স্বপ্ন দুটোই কেড়ে নিয়েছে। মাত্র ১৩ বছরের দীঘা মল্লিক, পশ্চিম পীরারবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী— যে আজ এক পা হারিয়ে বিছানায় শুয়ে আছে, চোখে জল, মুখে নীরব প্রশ্ন— “এখন আমি কীভাবে স্কুলে যাব?”
দুর্গাপূজার অষ্টমীর সন্ধ্যা। বাড়ি থেকে দিদিকে আনতে পুকুরিয়া গিয়েছিল দীঘা। ফেরার পথে ভ্যানগাড়িতে করে ফিরছিল সে। কিন্তু ভাগ্য যেন সেদিনই লিখে রেখেছিল এক নির্মম পরিণতি। পুকুরিয়া সড়কে একটি বেপরোয়া মোটরসাইকেল ভ্যানটিকে সজোরে ধাক্কা দেয়। মুহূর্তেই ছিটকে পড়ে যায় দীঘা। চারপাশে চিৎকার, আর রক্তে ভেসে যায় ছোট্ট কিশোরীর পা।
স্থানীয়রা দ্রুত তাকে উদ্ধার করে কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়, সেখান থেকে জরুরি অবস্থায় পাঠানো হয় ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে। টানা কয়েক ঘণ্টা অস্ত্রোপচারের পরও চিকিৎসকরা তার একটি পা বাঁচাতে ব্যর্থ হন। বাধ্য হয়ে কেটে ফেলতে হয় পা।
দীঘার বাবা দিলীপ মল্লিক, পেশায় দিনমজুর। চার সন্তানের মধ্যে দীঘাই একমাত্র মেয়ে, আর ছিল পরিবারের স্বপ্ন। চোখে জল নিয়ে তিনি বলেন,
“আমি সারাদিন খেটে যা পাই, তা দিয়ে ঘর চালাই। এখন মেয়ের চিকিৎসা, ওর পড়াশোনা— কিছুই সামলাতে পারছি না। শুধু চাই, কেউ যেন আমার মেয়ের পাশে দাঁড়ায়।”
দীঘার মা কাঁদতে কাঁদতে বলেন,
“ওর পা হয়তো আর ফিরবে না, কিন্তু যদি কেউ একটু সাহায্য করত, তাহলে হয়তো ওর মুখে আবার হাসি ফিরত।”
পশ্চিম পীরারবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানিয়েছেন, দীঘা ছিল ভীষণ মেধাবী ও ভদ্র ছাত্রী। সবসময় হাসিখুশি, ক্লাসে মনোযোগী। সহপাঠীরা বলছে, “দীঘা আপুর হাসিটা হারিয়ে গেছে, আমরা চাই সবাই মিলে ওকে আবার হাসাতে।”
বর্তমানে দীঘা ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসার পরও তাকে নিয়মিত থেরাপি ও কৃত্রিম পা স্থাপনের ব্যয়বহুল চিকিৎসা নিতে হবে। কিন্তু তার অসহায় পরিবার সেই ব্যয় বহন করতে অক্ষম।
কোটালীপাড়ার স্থানীয় সামাজিক সংগঠন, প্রশাসন ও সচ্ছল ব্যক্তিদের উদ্দেশে অনুরোধ— চলুন, আমরা সবাই মিলে এই কিশোরীর পাশে দাঁড়াই। তার কাটা পা হয়তো আর ফিরিয়ে দেয়া যাবে না, কিন্তু একটু মানবিক সহায়তাই পারে তার জীবনে ফিরিয়ে আনতে নতুন আলো, ফিরিয়ে দিতে সেই নিষ্পাপ হাসি।