বৈশাখে নয়, অগ্রহায়ণের শুরুতে 'নববর্ষ' পালন করবে ডাকসু!

2 week ago
VIEWS: 311

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি :

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ 'ডাকসু' ঘোষণা দিয়েছে যে আসছে পয়লা অগ্রহায়ণে তারা আয়োজন করবে ‘আদি নববর্ষ’ উৎসব। এই ঘোষণার পর থেকেই পুরো সাংস্কৃতিক অঙ্গন, গবেষক মহল, বিশ্লেষক, শিল্পী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে শুরু হয়েছে নানা সমালোচনা, প্রশ্ন ও প্রতিবাদ। শুক্রবার বিকেলে ঢাবির চারুকলা অনুষদে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডাকসুর সাহিত্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক মুসাদ্দিক ইবনে আলী মোহাম্মদ জানান, বিপ্লবী সাংস্কৃতিক ঐক্যের সহযোগিতায় রোববার চারুকলায় সারাদিনব্যাপী নবান্ন–কেন্দ্রিক উৎসবের মধ্য দিয়ে তাঁরা উদ্‌যাপন করবেন এই আদি নববর্ষ।

আয়োজকদের বর্ণনা অনুযায়ী দিনটি ভাগ করা হয়েছে চারটি পর্বে—চিত্রাঙ্কন, আনন্দযাত্রা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও অতিথি শুভেচ্ছা বিনিময়—যেখানে জুলাই, জেলেজীবন ও কৃষিজীবনকে উপজীব্য করে তিনটি আলাদা মোটিফে সাজানো হচ্ছে আনন্দযাত্রা। নবান্নের রং, কৃষকের জীবন, গ্রামীণ উৎসব-সংস্কৃতি এবং চারুকলা শিক্ষার্থী ও শিল্পীদের সৃষ্টিশীল অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে দিনটি পূর্ণতা পাবে বলে জানিয়েছে ডাকসু।

সংবাদ সম্মেলনে মুসাদ্দিক ইবনে আলী দাবি করেন যে বাঙালির নববর্ষের মূল ঐতিহ্য ছিল নবান্নকে কেন্দ্র করে পয়লা অগ্রহায়ণে পালন করা বার্ষিক উৎসব। তাঁর ব্যাখ্যায় উঠে আসে—বাংলা সনের অধিকাংশ মাস নক্ষত্রের নামে হলেও ‘অগ্রহায়ণ’ একমাত্র মাস যার নাম নক্ষত্রভিত্তিক নয়, বরং কৃষিজীবনের সঙ্গে যুক্ত। ঐতিহাসিক উল্লেখ টেনে তিনি বলেন যে সম্রাট আকবরের সময় খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে বৈশাখকে বছরের প্রথম মাস করা হলেও সাধারণ মানুষের সংস্কৃতিতে পয়লা অগ্রহায়ণই দীর্ঘদিন নববর্ষ হিসেবে পালিত হতো। আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পয়লা বৈশাখকে নববর্ষ উৎসব হিসেবে জনপ্রিয় করে তোলার পর এটি আধুনিক বাঙালির সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়।

ডাকসুর এই বক্তব্য ও আদি নববর্ষ উদ্‌যাপনের ঘোষণা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচণ্ড আলোচনা সৃষ্টি করেছে। অনেক সাংস্কৃতিক কর্মী ও গবেষক এটিকে ইতিহাসের অর্ধসত্য বা ইচ্ছাকৃত বিকৃতি বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাঁদের মতে, বাংলাদেশে পয়লা বৈশাখ এখন শুধু একটি উৎসব নয়, বরং একটি সামষ্টিক সাংস্কৃতিক পরিচয়—যা মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাঙালি জীবনের প্রতীক হিসেবেও দাঁড়িয়েছে। তাই ‘আদি নববর্ষ’ নাম দিয়ে আলাদা উৎসব প্রচার করা বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে। সাধারণ নেটিজেনদের অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন—যেখানে বৈশাখী উৎসবকে কেন্দ্র করে বাঙালির সবচেয়ে বৃহৎ অসাম্প্রদায়িক সাংস্কৃতিক ঐক্য গড়ে উঠেছে, সেখানে নতুন করে ‘অগ্রহায়ণ নববর্ষ’ প্রচারণা কি সত্যিই সংস্কৃতি রক্ষায় সহায়ক, নাকি নতুন বিভাজনের জন্ম দেবে?

অন্যদিকে ডাকসুর পক্ষ দাবি করেছে যে এই আয়োজন বৈশাখবিরোধী নয়। বরং ভুলে যাওয়া কৃষিভিত্তিক উৎসব-সংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার উদ্দেশ্যেই তারা নবান্নকে ‘আদি নববর্ষ’ নামে পুনরায় পরিচয় করাতে চাইছে।

এই ঘোষণার পর ঢাবি ক্যাম্পাস থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পর্যন্ত পুরো বিষয়টি নিয়ে যে মতবৈচিত্র্য সৃষ্টি হয়েছে, তা আগামী রোববারের অনুষ্ঠানের প্রতিক্রিয়ায় আরও স্পষ্ট হবে। চারুকলায় উৎসব আয়োজনে কী পরিমাণ মানুষের অংশগ্রহণ হয় এবং সাংস্কৃতিক মহল কীভাবে গ্রহণ করে—এখন সেটিই দেখার বিষয়।

to join the global Sanatani Hindu Community
Connect with Sanatani Hindus from all over the world — share, learn, and grow together.
Explore Questions, Bhajan Lyrics, Leelas, Feeds, Business Pages, Products, plus Shlokas, Events, Courses, Jobs, Marriage, Help Posts, and more.
মন্তব্য করতে Login অথবা Registration করুন