
“সবুজের আঙিনায় রেখে গেলেন চিরন্তন উত্তরাধিকার: প্রয়াত বৃক্ষজননী সালুমারাদা থিম্মাক্কা”
HindusNews ডেস্ক:
ভারতের পরিবেশ আন্দোলনের ইতিহাসে আজ যোগ হলো গভীর শোকের অধ্যায়। ১১৪ বছর বয়সে পরলোকগমন করলেন কর্ণাটকের কিংবদন্তি পরিবেশ কর্মী, গাছেদের ‘মা’ নামে পরিচিত পদ্মশ্রী সালুমারাদা থিম্মাক্কা। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন তিনি। বেঙ্গালুরুর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চলছিল তাঁর চিকিৎসা। শুক্রবার সকালেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন প্রকৃতির এই মহীয়সী সন্তান। তাঁর প্রয়াণে শোকাহত সমগ্র দেশ, শোকাহত পরিবেশ আন্দোলনের সকল কর্মী।
স্কুলের গণ্ডি না পেরোলেও যে প্রকৃত শিক্ষালাভ হয় জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে—থিম্মাক্কা সেই সত্যের জীবন্ত উদাহরণ। দাম্পত্য জীবনে সন্তান না হওয়ার কষ্টকে তিনি রূপান্তর করেছিলেন অদম্য সৃজনশক্তিতে। স্বামী বাডেগুড্ডা চিন্নাপ্পার সঙ্গে মিলে রাস্তার ধারে ৩৮৫টি বটগাছ রোপণ করে গড়ে তুলেছিলেন সবুজের এক অপূর্ব পথ। প্রতিটি গাছকে তিনি সন্তানসম যত্নে লালন করেছেন, জল দিয়ে, শাখায় ছায়া দিয়ে, দুর্যোগ থেকে আগলে রেখে। পরে জীবনের বিভিন্ন সময়ে তিনি একাই লাগিয়েছেন আরও আট হাজারেরও বেশি চারা, যা আজ প্রকৃতি সংরক্ষণে এক ঐতিহাসিক নিদর্শন।
থিম্মাক্কার লাগানো গাছের সারি আজ কর্ণাটকের হুলিকাল থেকে কুদুরু পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার দীর্ঘ এক সবুজ করিডোরে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় মানুষ থেকে শুরু করে দেশ-বিদেশের পরিবেশবিদ—সবার মুখে একটাই কথা, “তিনি শুধু গাছ লাগাননি, তিনি পৃথিবীকে নতুন জীবন দিয়েছেন।” তাঁর অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ভারত সরকার তাঁকে প্রদান করেছে পদ্মশ্রীসহ অসংখ্য জাতীয়-আন্তর্জাতিক সম্মান। তবু তাঁর কাছে সবচেয়ে বড় পরিচয় ছিল—গাছেদের মা।
বেদমন্ত্রের ভাষায় বলতে গেলে, “যেমন আগের প্রজন্ম শান্তির পথ ধরে গেছেন, তেমনি তিনি আজ শান্তির দেশেই যাত্রা করলেন।” ভুবনকে সবুজে ভরিয়ে দিয়ে, বহু প্রজন্মকে পরিবেশ রক্ষার অনুপ্রেরণা দিয়ে থিম্মাক্কা আজ অমরত্বের পথে পা বাড়ালেন।
হাজারো গাছের ছায়ায় আগামীদিনে মানুষ দাঁড়িয়ে যখন শীতল হাওয়া নেবে, তখন মনে পড়বে এই মহীয়সী নারীর কথা—যিনি নিজের জীবন দিয়ে প্রমাণ করেছেন, একজন মানুষও পৃথিবী বদলে দিতে পারে।