
‘খুঁইজেন না, বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে আছি’। পুলিশের কাছে নিখোঁজ তরুণীর রহস্যময় বার্তা!
নিজস্ব প্রতিবেদক :
বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নে কলেজছাত্রী পূজা দাস নিখোঁজ হওয়ার ছয় দিন পার হলেও এখনো তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরিবারের সদস্যরা এটিকে রহস্যজনক দাবি করলেও পুলিশ বলছে—ঘটনা ভিন্ন দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে। গত ৯ নভেম্বর সকালে বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজে যাওয়ার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হন পূজা। কিন্তু এরপর তিনি আর বাসায় ফেরেননি। স্বজনেরা সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজ করেও তার কোনো সন্ধান পায়নি।
নিখোঁজের পরদিন পূজার ভাই রিমন দাস থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অতিরিক্ত তথ্য না পাওয়া এবং সহযোগিতার ঘাটতি পুলিশের সন্দেহ আরও বাড়াচ্ছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মনিরুল ইসলাম জানান, তরুণী প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় বিষয়টি স্বেচ্ছায় গা–ঢাকা দেওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এর মধ্যেই তদন্ত শুরুর কিছুক্ষণ পর তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে একটি রহস্যময় বার্তা আসে। সেখানে লেখা ছিল—“আমাকে খুঁইজেন না। আমি আমার বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে আছি এবং ভালোই আছি।” বার্তাটি আসার পরই সংশ্লিষ্ট নম্বরটি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে পুলিশ নিশ্চিত হতে পারছে না যে বার্তাটি সত্যিই পূজা পাঠিয়েছে, নাকি অন্য কেউ ভিন্ন দিকে চালনা করার চেষ্টা করছে।
পরিবারের সঙ্গে কথা বলতেও অসুবিধার মুখে পড়ছে পুলিশ। পূজার ভাই রিমন দাস শুধু জানান যে জিডি করা হয়েছে এবং বাকি কাজ পুলিশই দেখছে। এমন উদাসীনতা আরও সন্দেহ তৈরি করছে বলে মনে করছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। তবে থানা সূত্র জানায়, পূজার অবস্থান শনাক্তের জন্য প্রযুক্তিগতভাবে চেষ্টা চলছে এবং পুলিশ ইতোমধ্যে কিছু অগ্রগতি পেয়েছে।
আগৈলঝাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ অলিউল ইসলাম বলেন, এটি অপহরণ নাকি স্বেচ্ছায় নিখোঁজ হওয়া—এখনই নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। পরিবার কোনো সূত্র দিতে পারছে না, আর সেই নম্বরটি বন্ধ থাকায় ট্র্যাক করাও সম্ভব হয়নি। তবুও পুলিশ বিশেষ কৌশল ব্যবহার করে এগোচ্ছে এবং তারা আশাবাদী যে খুব শিগগিরই পূজাকে উদ্ধার করা যাবে। তিনি আরও বলেন, “আমরা নিশ্চিত যে মেয়েটি ভালো আছে। তাকে উদ্ধার করতে পারলে আসল কারণও জানা যাবে।”
পূজা দাস স্থানীয়ভাবে পরিচিত একটি পরিবারের মেয়ে—মধ্য শিহিপাশা এলাকার নারায়ণ চন্দ্র দাসের কন্যা এবং বরিশালের সুপরিচিত মিষ্টি ব্যবসায়ী কার্তিক দাসের নাতনি। তার নিখোঁজের খবর এলাকায় বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। বার্তা পাঠানোর পর নম্বর বন্ধ হয়ে যাওয়া, পরিবারের সন্দেহজনক নীরবতা এবং পুলিশের দ্বিধান্বিত অবস্থান—সব মিলিয়ে পূজা দাসের নিখোঁজের ঘটনাটি এখন আরও বেশি রহস্যময় হয়ে উঠেছে।
পুলিশ বলছে, যেকোনো মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি আসতে পারে। আর পূজা দাস সত্যিই প্রেমিকের সঙ্গে নিরাপদে আছেন, নাকি এর আড়ালে লুকিয়ে আছে অন্য কোনো গল্প—সেই সত্য জানা এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র।