
ফেসবুকের সহায়তায় ৪০ দিন পর পরিবারের কাছে ফিরলেন নিখোঁজ বৃদ্ধা সভ্য রানী বিশ্বাস
নিজস্ব প্রতিবেদক :
বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলায় ফেসবুকের সহায়তায় নিখোঁজ এক মানসিক ভারসাম্যহীন বৃদ্ধাকে অবশেষে খুঁজে পেয়েছে তার পরিবার। প্রায় ৪০ দিন আগে হারিয়ে যাওয়া সভ্য রানী বিশ্বাস (৭৫) ফিরে পেয়েছেন আপন ঠিকানা, ফিরে গেছেন আপনজনদের কাছে—যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানবিকতার দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রশংসা কুড়িয়েছে।
সভ্য রানী বিশ্বাস আগৈলঝাড়ার বারপাইকা গ্রামের জানকী নাথ বিশ্বাসের স্ত্রী। পরিবার জানায়, দেড় মাস আগে তিনি আগৈলঝাড়ার আস্কর গ্রামে মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যান। দীর্ঘ খোঁজাখুঁজির পরও তার সন্ধান না পেয়ে গভীর উদ্বেগে ছিল পরিবার।
নিখোঁজ হওয়ার কয়েকদিন পর বরিশালের গৌরনদী পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের টরকীর চর এলাকার একটি ব্রীজের পাশে কান্নাকাটি করতে দেখা যায় অজ্ঞাত এক বৃদ্ধাকে। স্থানীয় কয়েকজন যুবক মানবিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে তাকে উদ্ধার করে টরকী বন্দর ট্রাস্ট ওল্ড এজ অ্যান্ড কেয়ার হোমে নিয়ে যান। সেখানে তিনি প্রায় ৪০ দিন নিরাপদে ছিলেন আশ্রমের তত্ত্বাবধানে।
আশ্রম কর্তৃপক্ষ তার পরিবারের পরিচয় জানতে বিভিন্ন প্রচেষ্টা চালালেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি। শেষ পর্যন্ত আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা সেনাবাহিনীর ল্যান্স কর্পোরাল কাজী সুজন মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) রাতে বৃদ্ধার ছবি ও ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করেন। পোস্টটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।
বুধবার বিকেলে সেই ভাইরাল পোস্টে চোখ পড়ে সভ্য রানীর ছেলে গৌরঙ্গ বিশ্বাসের। তিনি তৎক্ষণাৎ মাকে শনাক্ত করেন এবং আশ্রমে গিয়ে তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনেন। মাকে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে গৌরঙ্গ বিশ্বাস বলেন,
“৪০ দিন ধরে আমরা মাকে খুঁজছিলাম। কোথাও কোনো খবর পাইনি। ফেসবুকের মাধ্যমে খবর পেয়ে অবশেষে মাকে ফিরে পেয়েছি। আশ্রম কর্তৃপক্ষের প্রতি আমরা আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব।”
আশ্রমের ম্যানেজার জাহিদ হাসান জানান, স্থানীয়দের মাধ্যমে বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয় এবং আশ্রমে রাখা হয়। তার পরিচয় জানতে অনেক চেষ্টা করা হলেও কোনো সূত্র মিলছিল না। পরে ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়। যথাযথ কাগজপত্র যাচাই শেষে বৃদ্ধাকে তার ছেলের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এই ঘটনাটি আবারও প্রমাণ করেছে—সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে মানবিক ও সচেতনভাবে ব্যবহার করা হলে তা হারিয়ে যাওয়া মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে, হতে পারে পরিবার ও সমাজের সেতুবন্ধন।