
চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে দরিদ্র হিন্দু কৃষকের কাটা ধান পুড়িয়ে দিল দুর্বৃত্তরা!
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি :
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার হারুয়ালছড়ি ইউনিয়নের মহানগর গ্রামে সাড়ে ৩ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে চাষ করা ৪০০ শতক জমির কাটা ধান ঘরে তোলার আগেই পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ঘটে এই মর্মান্তিক ঘটনা। এতে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে তাপস কান্তি দে নামের এক হিন্দু কৃষক পরিবার।
পরিবারের সদস্যরা জানান, তাপস দে, তার স্ত্রী রিংকু রানী দে, সন্তান এবং পুত্রবধূ—সবাই মিলে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ১২ কানি বর্গা জমিতে আমন ধান চাষ করেছিলেন। জমিতে ভালো ফলনও হয়েছিল। ধান কেটে জমিতেই স্তুপ করে রাখেন তারা। কিন্তু ঘরে তোলার আগমুহূর্তে দুর্বৃত্তরা সেই ১০ কানি বা প্রায় ৪০০ শতক জমির সমস্ত ধান আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে রিংকু রানী দে বলেন,
“আমরা পরিবার মিলে সাড়ে ৩ লাখ টাকা ঋণ করেছি। ধান ভালো হয়েছিল, ভেবেছিলাম এবার কিছুটা নিশ্চিন্ত হবো। কিন্তু আমাদের সব পরিশ্রম শেষ করে দিয়েছে। এখন মাথার উপর ঋণের বোঝা—আমরা কোথায় যাব?”
তাপস দে জানান, ধান পাহারা দিতে রাতে কয়েকবারই তারা মাঠে গিয়েছিলেন। কিন্তু ঘটনার রাতে গভীর রাত ৩টার দিকে গিয়ে দেখতে পান ধানের স্তুপে আগুন জ্বলছে। তাদের ডাকচিৎকারে স্থানীয়রা ও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে গেলেও কিছুই আর রক্ষা করা যায়নি।
ঘটনার পর ভুক্তভোগী কৃষক তাপস দে ভূজপুর থানায় তিনজনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযুক্তরা হলেন—
সানী দাশ, প্রদীপ কুমার ও তয়ন দেব।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন চৌধুরী বলেন,
“ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। তারা ধারদেনা করে ধান চাষ করেছিলেন। ফলন ঘরে তোলার আগ মুহূর্তে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা মানবতারও লঙ্ঘন। অভিযোগের ভিত্তিতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু সালেক বলেন,
“একটি পরিবারই শুধু নয়, দেশেরও ক্ষতি হলো। একজন কৃষকের ফলন তুলতে কত পরিশ্রম লাগে তা সবাই জানে। আমরা প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেব।”
ভূজপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহাবুবুল আলম জানান,
“ধান পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ পেয়েছি। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তদন্তের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
মর্মান্তিক এই ঘটনায় এলাকায় নিন্দার ঝড় উঠেছে। ঋণগ্রস্ত কৃষক পরিবারটি এখন মানবেতর অবস্থায় দিন পার করছে। স্থানীয়রা দ্রুত সুষ্ঠু তদন্ত ও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।