
কোমরসমান পানি, হাঁটুসমান কাদা—নববধূকে কোলে নিয়ে ঘরে ফিরলেন বর দিবাকর
সন্দ্বীপ প্রতিনিধি, HindusNews:
চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ সন্দ্বীপে যাতায়াত সংকট আবারও আলোচনায়। নতুন বউকে কোলে করে কাদা–পানির ভেতর দিয়ে স্বামীর এগিয়ে যাওয়ার সেই ভিডিও ছড়িয়ে পড়তেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। তবে ঘটনাটি কোনো নাটকের দৃশ্য নয়—এটি সন্দ্বীপবাসীর নিত্যদিনের বাস্তব সংগ্রাম।
বাঁশখালী থেকে বিয়ে করে নববধূকে নিয়ে গত ৯ নভেম্বর নৌপথে বাড়ি ফিরছিলেন দিবাকর বণিক। কুমিরা থেকে গুপ্তছড়া ঘাটে পৌঁছাতেই শুরু হয় ভাটা। সামনে কোমরসমান পানি, হাঁটুসমান কাদা। বাধ্য হয়েই নববধূকে কোলে তুলে প্রায় আধা কিলোমিটার কাদা পেরিয়ে ঘাটে আসেন তিনি। দৃশ্যটি ভিডিও করে রাখেন সঙ্গে থাকা এক আত্মীয়। পরে সেটি ভাইরাল হলে দেশের বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয় আলোচনা।
ভিডিওতে দিবাকরকে বলতে শোনা যায়—
“আজকে আমার আনন্দের দিন। কিন্তু এই আনন্দের দিনেই উনাকে নিয়ে এক হাঁটু কাদা মাড়িয়ে কোলে করে আনতে হচ্ছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হলো, তারপরও সন্দ্বীপে মানুষের এই ভোগান্তি কমেনি।”
স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, এমন দুর্ভোগ তাদের কাছে নতুন কিছু নয়। ভাটার সময় যাত্রীদের ওঠানামা করাতে ঘাট শ্রমিকরা টাকার বিনিময়ে কোলে বা কাঁধে তুলে নিয়ে যান। নারী, শিশু, বৃদ্ধদের জন্য এই পথচলা আরও বিপজ্জনক। কাদায় পিছলে পড়ে যাওয়া, আহত হওয়া, এমনকি রোগী ও প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে অতীতে।
গত ২৬ অক্টোবরও ঘটে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। এক বৃদ্ধা যাত্রী কাদা মাড়িয়ে স্পিডবোটে উঠতে গিয়ে মাঝপথে অচেতন হয়ে পড়ে যান। কয়েকজন যুবক তাকে দুই হাত ধরে টেনে নৌযানে নিয়ে যান। ঘটনাটির ভিডিও ছড়িয়ে পড়তেই মানবিকতার পাশাপাশি প্রশ্ন ওঠে—কতদিন চলবে সন্দ্বীপের এই অবস্থা?
দ্বীপের যাতায়াত ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা সরকারি প্রতিষ্ঠান বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক (বন্দর ও পরিবহন) নয়ন শীল HindusNews-কে বলেন—
“খননকাজ শেষ হলে ফেরির পল্টুনে স্পিডবোটসহ অন্যান্য নৌযান ভেড়ানোর ব্যবস্থা করা হবে। তখন এ ধরনের সমস্যা আর থাকবে না।”
কিন্তু স্থানীয়দের ভিন্ন মত। তাদের অভিযোগ, বহু বছর ধরে উন্নয়ন পরিকল্পনার কথা শোনা গেলেও বাস্তবে এখনো তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। অপরিকল্পিত খনন, অযত্নে পড়ে থাকা পল্টুন আর পর্যাপ্ত নৌযানের অভাবে যাতায়াত সংকট দিন দিন আরও ভয়াবহ হচ্ছে।