


বিএনপি নেতা হারুনুর রশিদের সাম্প্রদায়িক বক্তব্যে সনাতন সংগঠনগুলোর তীব্র নিন্দা–প্রতিবাদ
HindusNews Desk :
বিএনপি নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ হারুনের সাম্প্রতিক বিতর্কিত মন্তব্যকে কেন্দ্র করে সারাদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এক সাম্প্রতিক বক্তব্যে তিনি হিন্দু ধর্মের পূজাকে “শয়তানের ইবাদত” হিসেবে আখ্যা দেন, যা প্রকাশ্যে আসার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে বিভিন্ন সনাতন সংগঠনের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। এই বক্তব্যকে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার অপচেষ্টা এবং সংবিধানবিরোধী উস্কানি হিসেবে দেখছে সনাতন সম্প্রদায় ও অধিকারকর্মীরা।
ঘটনার পর “সনাতনী অধিকার আন্দোলন” এক যৌথ প্রেস বিবৃতি প্রকাশ করে গভীর উদ্বেগ এবং তীব্র নিন্দা জানায়। সংগঠনের সভাপতি প্রসেনজিৎ কুমার হালদার এবং সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সুশান্ত অধিকারী বলেন, একজন জনপ্রতিনিধি এবং নির্বাচনপূর্ব প্রার্থীর মুখে এমন অবমাননাকর বক্তব্য অত্যন্ত দুঃখজনক এবং অগ্রহণযোগ্য। তারা উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র, যেখানে সংবিধান প্রতিটি নাগরিকের ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষার গ্যারান্টি দেয়। এমন প্রেক্ষাপটে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পূজাকে “শয়তানের ইবাদত” বলা শুধু ধর্মীয় চেতনাকে আঘাত করা নয়, রাষ্ট্রের সাংবিধানিক মূল্যবোধের প্রতি অবমাননা। তারা অবিলম্বে হারুনুর রশিদের দলীয় মনোনয়ন বাতিল, দল থেকে বহিষ্কার এবং ধর্ম অবমাননার অভিযোগে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
একই ঘটনায় বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটও কঠোর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। সংগঠনের মুখপাত্র ও নির্বাহী মহাসচিব পলাশ কান্তি দে বলেন, তার এই বক্তব্য হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক, ক্ষোভ এবং নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি তৈরি করেছে। এমন মন্তব্য সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদী শক্তিকে উৎসাহিত করতে পারে বলেও তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেন। পলাশ কান্তি দে আরও বলেন, একজন সাবেক এমপির এমন বক্তব্য বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। তিনি বক্তব্য প্রত্যাহার, সর্বজনীন ক্ষমা এবং প্রাথমিক মনোনয়ন বাতিলের দাবি জানান। তিনি সতর্ক করে বলেন, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আসন্ন নির্বাচনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
এ ঘটনায় বাংলাদেশ সনাতন পার্টিও তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে। তারা মন্তব্য করে, হিন্দু ধর্ম ও পূজা সম্পর্কে এমন বিদ্বেষমূলক মন্তব্য রাষ্ট্রের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য হুমকিস্বরূপ এবং এসব মন্তব্য রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বিপজ্জনক।
ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন সনাতনী ব্যক্তিত্ব, মানবাধিকার কর্মী, বিশ্লেষক এবং সাধারণ নাগরিকরা তীব্র নিন্দা প্রকাশ করছেন। অনেকেই লিখেছেন, এমন মন্তব্য দেশের ধর্মীয় সম্প্রীতির পরিবেশকে আঘাত করে এবং এ ধরনের বক্তব্যের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা না নিলে এর পুনরাবৃত্তি ঘটবে। অনেকে এটিকে নির্বাচনী রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িকতা উসকে দেওয়ার নতুন কৌশল বলে উল্লেখ করেছেন।
হারুনুর রশিদের বক্তব্যের জেরে দেশে যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে, তা থেকে পরিষ্কার—বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ সাম্প্রদায়িক উস্কানি ও বিদ্বেষমূলক রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করছে। সনাতন সংগঠনগুলোর দাবি, রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষায় দৃঢ় ভূমিকা রাখা।