


“পূজাকে শয়তানের ইবাদত বলায়” সাবেক এমপি হারুনুর রশিদকে আইনগত নোটিশ—৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ক্ষমা চাওয়ার আলটিমেটাম
HindusNews ডেস্ক :
সনাতন ধর্মের অন্যতম প্রধান আচার ‘পূজা’–কে “শয়তানের ইবাদত” বলে উল্লেখ করায় সাবেক সংসদ সদস্য জনাব হারুনুর রশিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির মুখপাত্র সাজন কুমার মিস্ত্রীর পক্ষ থেকে ১৭ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে পাঠানো এই লিগ্যাল নোটিশে হারুনুর রশিদকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রকাশ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নোটিশ প্রেরণ করেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট সুমন কুমার রায়। তিন পাতার বিস্তারিত লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়, হারুনুর রশিদ একটি জনসভায় প্রকাশ্যে “পূজা হলো শয়তানের ইবাদত” বলে মন্তব্য করেন, যা মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এই বক্তব্যকে নোটিশদাতা “অশ্লীল, মনগড়া, ভিত্তিহীন এবং সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষপূর্ণ” হিসেবে উল্লেখ করেন।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়—
পূজা একটি সংস্কৃত শব্দ, যার অর্থ আরাধনা, উপাসনা, ভক্তি বা শ্রদ্ধা। এটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঈশ্বরের নিকট ভক্তি প্রকাশের অন্যতম পবিত্র পদ্ধতি। শুধু হিন্দু নয়, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মাবলম্বীরাও তাঁদের উপাসনাকে ‘পূজা’ বলে অবহিত করেন। এমন পবিত্র শব্দকে “শয়তানের ইবাদত” বলে আখ্যায়িত করা কোটি কোটি সনাতনী সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে সরাসরি আঘাতের সামিল।
নোটিশে আরও বলা হয়, একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের সংবিধান প্রত্যেক নাগরিকের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। একজন সাবেক জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে এমন ধর্মবিদ্বেষী বক্তব্য দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং রাষ্ট্রের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার ইঙ্গিত বহন করে।
নোটিশে এটিও উল্লেখ করা হয় যে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর “রেইনবো নেশন” চেতনা ও ধর্মীয় সহাবস্থানের নীতির সঙ্গেও হারুনুর রশিদের এই বক্তব্য সাংঘর্ষিক। এমন মন্তব্য দেশের অভ্যন্তরে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে নির্বাচনী পরিবেশ অস্থির করার ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।
সাজন কুমার মিস্ত্রী তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন—
“হারুনুর রশিদ মহোদয় তাঁর বক্তব্যের মাধ্যমে আমাদের হৃদয়ে গভীর আঘাত করেছেন। তাই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে সনাতনী হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে ক্ষমা চাইতেই হবে। সেই কারণেই আমার পক্ষ থেকে আইনগত নোটিশ পাঠানো হয়েছে। আশা করি তিনি ভুল বুঝতে পেরে সন্তোষজনক বার্তা দেবেন।”
নোটিশে হারুনুর রশিদকে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে—
৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বক্তব্য প্রত্যাহার এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা না করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যার দায়ভার সম্পূর্ণভাবে তাকে বহন করতে হবে।
বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রেক্ষাপটে এই লিগ্যাল নোটিশ দেশব্যাপী আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখন দেখার বিষয়, সাবেক এই সংসদ সদস্য ক্ষমা চেয়ে পরিস্থিতি প্রশমিত করবেন নাকি বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়ার দিকে এগোবে।