


জকসু নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী চন্দন কুমারের বিরুদ্ধে ভুয়া সংবাদ প্রচার! সনাতনী শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি :
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) নির্বাচনে সহ–সভাপতি (ভিপি) পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন সংগ্রহ করার পর থেকেই সনাতনী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এবং মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী চন্দন কুমার দাসকে ঘিরে বিস্তর অপপ্রচার ও ভুয়া তথ্য ছড়ানো শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু অসাধু ও অন্তর্দ্বন্দ্বপ্রবণ মহলের উদ্যোগে এই অপপ্রচারগুলো এখন ক্যাম্পাসজুড়ে আলোচনা ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। সনাতনী শিক্ষার্থীদের দাবি, চন্দনের ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি নষ্ট করার পাশাপাশি পুরো সনাতনী কমিউনিটিকে সন্দেহ ও কটূক্তির লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করার এক পরিকল্পিত প্রচেষ্টা চলছে।
বিষয়টি নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিতর্ক তৈরি হয় যখন ‘জবিয়ানস’ নামে একটি ফেসবুক পেজ ধারাবাহিকভাবে চন্দনকে উদ্দেশ্য করে অবমাননাকর ও প্রমাণহীন পোস্ট দিতে শুরু করে। সেখানে ইঙ্গিতপূর্ণ ভাষায় বলা হয় যে চন্দন নাকি সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্বের নামে কারও ‘ডামি প্রার্থী’ হিসেবে দাঁড়িয়েছেন। এমনকি ঐতিহাসিক বিশ্বাসঘাতকতার উদাহরণ টেনে তাকে ‘মীরজাফর’ উপমা পর্যন্ত দেওয়া হয়। তাদের আরেকটি পোস্টে দাবি করা হয়, গত কয়েকদিন ধরে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন বিভাগে হিন্দু শিক্ষার্থীদের নাকি একটি নির্দিষ্ট পদের জন্য খুঁজে বেড়ানো হয়েছে এবং কয়েকজনকে ‘অফার’ দিয়ে প্রার্থী হতে বলা হয়েছিল। তারা আরও লেখে, কেউ রাজি না হওয়ায় নাকি শেষে একটি সংগঠনের সেক্রেটারি সুবিধার লোভে রাজি হয়েছেন এবং পুরো কমিউনিটিকেই নাকি “বিক্রি” করে দিয়েছেন।
এসব বক্তব্যে কোনো প্রমাণ নেই, নেই কোনো বাস্তব তথ্যের মিল। বরং এগুলো সনাতনী শিক্ষার্থীদের মতে পুরোপুরি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়কে ছোট করা এবং চন্দনের ব্যক্তিগত ইমেজ নষ্ট করার জন্য তৈরি করা অপপ্রচার। ক্যাম্পাসের সনাতনী শিক্ষার্থীরা এ ধরনের পোস্টকে সরাসরি ধর্মীয় বিদ্বেষ উসকে দেওয়ার মতো উস্কানিমূলক বলে মনে করছেন। তাদের ভাষায়, একজন ছাত্র নিজের যোগ্যতা, অবস্থান ও সাহস থেকে মনোনয়ন সংগ্রহ করলেই কিছু মহল অযথা সন্দেহ, ঘৃণা ও অপমান ঢেলে তাকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে।
চন্দনের নিকটজনদের মতে, তিনি নির্বাচন করবেন নিজের নীতি ও অবস্থান ধরে রেখে। কোনো রাজনৈতিক পক্ষ বা গোষ্ঠীর সুবিধার জন্য তিনি মাঠে নামেননি। বরং তিনি বিশ্বাস করেন, শিক্ষার্থীরা গুজবে নয়, কাজ, আচরণ ও চরিত্র দেখেই সিদ্ধান্ত নেবেন। তাদের আরও অভিযোগ, এসব অপপ্রচার ছড়িয়ে নির্বাচনী পরিবেশ অস্থির করার পাশাপাশি সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও মানসিক স্বস্তিকেও প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে।
জকসু নির্বাচনের ইতিহাসে ভুয়া তথ্য, গুজব, চরিত্রহনন ও বিভ্রান্তিমূলক পোস্ট নতুন নয়। তবে এবারের ঘটনাটি বিশেষভাবে আলোচনায় এসেছে কারণ এটি সরাসরি ধর্মীয় পরিচয়কে ইস্যু করে একটি সম্পূর্ণ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অবমাননাকর ও সন্দেহজনক বর্ণনা তৈরি করছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে তাই উদ্বেগ বেড়েছে যে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হচ্ছে, যা ক্যাম্পাসের শান্তিপূর্ণ পরিবেশের জন্য হুমকি।
চন্দন কুমার দাসের বিরুদ্ধে এসব অসত্য প্রচার অব্যাহত থাকায় সনাতনী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নজরদারি ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন। তাদের আশা, নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা মতামত ও কাজের ভিত্তিতে হোক, ভুয়া পোস্ট, বিদ্বেষমূলক মন্তব্য কিংবা ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়িয়ে নয়।