
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সংখ্যালঘু-বান্ধব করতে এবং চিন্ময় প্রভুর মুক্তির দাবি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনে বিএমজেপি’র প্রস্তাবনা
ঢাকা প্রতিনিধি :
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও সংখ্যালঘু-বান্ধব করতে আজ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা পেশ করেছে বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি (বিএমজেপি)। নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত সংলাপের অংশ হিসেবে দলের প্রতিনিধিদল লিখিত স্মারকলিপি নির্বাচন কমিশন সচিবের হাতে তুলে দেয়।
বিএমজেপি জানায়, নির্বাচনকালীন সময়ে দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা সবসময়ই অতিরিক্ত ঝুঁকির মুখে থাকেন। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের বর্তমান আলোচ্যসূচিকে স্বাগত জানিয়ে সংখ্যালঘু নিরাপত্তা, ভোটাধিকার এবং নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করতে তারা কয়েকটি সুনির্দিষ্ট ও অত্যন্ত জরুরি প্রস্তাব তুলে ধরে।
সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রশ্নে বিএমজেপি জোর দিয়ে জানায়—নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন-পরবর্তী দশ দিন পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা জরুরি। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, ভয়ভীতি কিংবা চাপ প্রয়োগের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কোনো প্রার্থীর ভূমিকা প্রমাণিত হলে তাৎক্ষণিকভাবে তার প্রার্থিতা বাতিল করার আহ্বানও জানায় দলটি।
স্মারকলিপিতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে উল্লেখ করা হয় ধর্মীয় নেতা শ্রী চিন্ময় কৃষ্ণদাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির বিষয়টি। বিএমজেপির ভাষ্য মতে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পরবর্তী সহিংস ও অস্থির সময়ে তিনি সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়িয়ে আশার আলো দেখিয়েছিলেন। অথচ বর্তমানে তিনি “মিথ্যা মামলায়” বন্দি আছেন। নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করা এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আস্থা পুনরুদ্ধারে তার নিঃশর্ত মুক্তি জরুরি বলে মনে করে দলটি।
নির্বাচনকে ঘিরে গুজব, ডিপফেক ভিডিও বা এআই-নির্মিত বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে সম্ভাব্য সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা তৈরি ঠেকাতে নির্বাচন কমিশনের অধীনে একটি শক্তিশালী সাইবার মনিটরিং সেল গঠনের দাবি জানায় বিএমজেপি। তারা প্রস্তাব করে—এ সেল যেন কোনো গুজব ছড়ালে এক ঘণ্টার মধ্যে তার সত্যতা যাচাই করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে।
প্রবাসী সংখ্যালঘু ভোটার এবং দেশের ভেতরে নিরাপত্তাহীন অঞ্চলে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ ভোটারদের জন্য ডাকযোগে ভোট দেওয়া বা দেশে না থেকেও ভোটের অধিকার প্রয়োগের ব্যবস্থা চালুরও দাবি তোলে দলটি। তাদের মতে, Out of Country Vote ও In Country Postal Vote চালু হলে ভোটদানে আগ্রহ এবং অংশগ্রহণ উভয়ই বাড়বে।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো বন্ধ করা এবং রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে ধর্মীয় আক্রমণাত্মক ভাষায় আখ্যায়িত করার প্রবণতা রোধেও কঠোর অবস্থান নিতে কমিশনের প্রতি অনুরোধ জানায় দলটি। তাদের মতে, মসজিদ, মন্দির বা অন্য কোনো উপাসনালয়কে রাজনৈতিক মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করা হলে তা নির্বাচনী আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন—এ জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা থাকা উচিত।
এ ছাড়া দেশব্যাপী জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সংখ্যালঘুদের জন্য বিশেষ সুরক্ষা সেল ও হটলাইন চালু করা, নির্বাচনী স্বচ্ছতার স্বার্থে ৩০০ আসনের ভোটার তালিকা রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য উন্মুক্ত করা এবং ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টগুলোর কাঠামোগত সংস্কারের দাবিও জানায় বিএমজেপি।
নির্বাচন কমিশনের সংলাপে সভাপতিত্ব করেন নির্বাচন কমিশনার এ. এম. এস. নাসির উদ্দিন। অন্যান্য নির্বাচন কমিশনাররাও উপস্থিত ছিলেন। সংলাপ শেষে বিএমজেপি জানায়—তাদের পূর্ববর্তী ঘোষণার পর সাধারণ নাগরিকেরা যেসব মন্তব্য, মতামত ও সুপারিশ পাঠিয়েছেন, সেগুলোও তারা নির্বাচন কমিশনের সামনে তুলে ধরেছে। দলটির বক্তব্য—সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা, অধিকার ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে তারা সর্বদা দায়িত্বশীল এবং গঠনমূলক ভূমিকা পালন করবে।
বিএমজেপি আশা প্রকাশ করে যে নির্বাচন কমিশন তাদের এসব প্রস্তাব সদয় বিবেচনা করে একটি ভীতিমুক্ত, ন্যায়সংগত ও সর্বজনগ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে সচেষ্ট হবে।