জগন্নাথ হলের জমিদাতা ও শিক্ষাবিস্তার আন্দোলনের পথিকৃৎ কিশোরীলাল রায় চৌধুরীকে স্মরণ

1 week ago
VIEWS: 80

HindusNews ডেস্ক :

বাংলার শিক্ষাবিস্তারের অন্যতম অগ্রদূত, দানশীল জমিদার এবং ঢাকা শহরের আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ভিত্তিস্রষ্টা কিশোরীলাল রায় চৌধুরীর আজ ১৭৭তম জন্মজয়ন্তী। ঢাকার জগন্নাথ হল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং কিশোরীলাল জুবিলী স্কুল—এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের জন্মকাহিনীর কেন্দ্রে যিনি, সমাজের বৃহত্তর অংশ তাঁর সম্পর্কে আজও যথাযথ ধারণা রাখে না। অথচ তাঁর দান, কর্ম, মনীষা—সমগ্র জাতির ইতিহাসে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার এক অনন্য দলিল।

১৮৪৮ সালের ১৯ নভেম্বর মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থানার বালিয়াটি জমিদার পরিবারের পশ্চিম বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন কিশোরীলাল রায় চৌধুরী। তাঁর পিতা ছিলেন মহাত্মা জগন্নাথ রায় চৌধুরী—যিনি নিজেও ছিলেন সামাজিক উন্নয়নে নিবেদিতপ্রাণ। উচ্চশিক্ষা না থাকা সত্ত্বেও কিশোরীলাল রায় চৌধুরী ছোটবেলা থেকেই শিক্ষাবিস্তারের প্রতি অসীম অনুরাগী ছিলেন। মাত্র দশ বছর বয়সে, ১৮৫৮ সালে, তিনি আর্থিক সংকটে থাকা একটি অবৈতনিক বিদ্যালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং পরবর্তী সময়ে পিতার স্মৃতিকে ধারণ করে সেই বিদ্যালয়ের নাম দেন জগন্নাথ স্কুল। বছরের পর বছর তাঁর তত্ত্বাবধানে ও অর্থায়নে বিদ্যালয়ের উন্নতি ঘটে, ১৮৮৪ সালে এটি জগন্নাথ কলেজে রূপান্তরিত হয় এবং শতবর্ষ পরে ২০০৫ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে এসে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে নিজ মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে তাঁর অবদান আরও গভীর। ১৯২১ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে ছাত্রাবাসের মারাত্মক সংকট দেখা দেয়। বিশেষ করে হিন্দু শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা আবাসনের প্রয়োজন মেটানো কঠিন হয়ে পড়ে। তখনই এগিয়ে আসেন কিশোরীলাল রায় চৌধুরী। ঢাকার ইংলিশ রোড–বিধান রোড সংলগ্ন তাঁর বিশাল সম্পত্তি তিনি অকাতরে দান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস নির্মাণের জন্য। সেই দানকৃত ভূমিতেই গড়ে ওঠে জগন্নাথ হল—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী আবাসিক হল। এই মহৎ উদ্যোগ ছিল তাঁর পিতা জগন্নাথ রায় চৌধুরীর প্রতি ভালোবাসা ও স্মৃতিকে চিরস্থায়ী করার এক আন্তরিক প্রয়াস। তাই হলের নামও রাখা হয় ‘জগন্নাথ হল’। তাঁর এই দান ঢাকায় হিন্দু শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যার সমাধান করে এবং উচ্চশিক্ষার বিস্তারে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।

শুধু শিক্ষা নয়, সাংস্কৃতিক জগতেও তাঁর প্রভাব ছিল গভীর। ১৮৮৭ সালে ঢাকার বাংলা বাজারে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন কিশোরীলাল জুবিলী হাইস্কুল। একই বছরে রানি ভিক্টোরিয়ার রাজত্বের ষাট বছর পূর্তি উপলক্ষে ঢাকায় নির্মাণ করেন ডায়মন্ড জুবিলী থিয়েটার। এটি ছিল তৎকালীন সময়ে ঢাকার অন্যতম আধুনিক নাট্যমঞ্চ, যা পরে লায়ন্স সিনেমা হলে রূপান্তরিত হয়। বালিয়াটি অঞ্চলে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন দাতব্য চিকিৎসালয়, যা আজও সরকারি ব্যবস্থাপনায় জনগণের সেবা করে যাচ্ছে—যা তাঁর মানবিকতার আরেক মূর্ত প্রতীক।

সামাজিক উন্নয়ন, শিক্ষাসেবা, সাংস্কৃতিক বিকাশ—প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর অবদান ছিল দৃষ্টান্তমূলক। ১৯২৫ সালের ৩ জুলাই তিনি পরলোকগমন করেন। কিন্তু তাঁর দানকৃত জমি, প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, এবং রেখে যাওয়া মানবিক কাজের ঐতিহ্য আজও বাঙালির চেতনায় অম্লান। জগন্নাথ হলের প্রতিটি ইট, প্রতিটি স্মৃতিস্তম্ভ তাঁর উদারতা ও জনসেবার ইতিহাস বহন করে চলছে।

to join the global Sanatani Hindu Community
Connect with Sanatani Hindus from all over the world — share, learn, and grow together.
Explore Questions, Bhajan Lyrics, Leelas, Feeds, Business Pages, Products, plus Shlokas, Events, Courses, Jobs, Marriage, Help Posts, and more.
মন্তব্য করতে Login অথবা Registration করুন