
স্বরস্বতী পূজার দিনেই রুয়েট ভর্তি পরীক্ষা! হিন্দু শিক্ষার্থীদের শঙ্কা ও ভোগান্তির আশঙ্কা
HindusNews ডেস্ক :
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) স্নাতক প্রথমবর্ষ (২০২৫–২৬) শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ২৩ জানুয়ারি ২০২৬, যেদিন সারাদেশে উদযাপিত হবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব স্বরস্বতী পূজা। ধর্মীয় অনুষ্ঠানের এই গুরুত্বপূর্ণ দিনে পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্তে হিন্দু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে বিরাজ করছে তীব্র উদ্বেগ, ক্ষোভ ও হতাশা।
রুয়েটের ১৫৪তম (জরুরি) অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল সভায় এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এস এম আব্দুর রাজ্জাক। এ বছর প্রথমবারের মতো রুয়েটের পাশাপাশি বুয়েট কেন্দ্রেও অভিন্ন প্রশ্নপত্রে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এমসিকিউ পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিতব্য এ পরীক্ষায় ১২ শতাধিক আসনের বিপরীতে অংশ নেবে প্রায় ১৯ হাজার শিক্ষার্থী।
যোগ্যতা হিসেবে ২০২২ বা ২০২৩ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষায় ন্যূনতম জিপিএ–৪.০০ এবং ২০২৫ সালের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ–৫.০০ সহ গণিত, পদার্থবিদ্যা ও রসায়নে মোট জিপি–১৪ থাকার শর্ত পূরণ করতে হবে।
কিন্তু পরীক্ষার নির্ধারিত দিনটি হিন্দু শিক্ষার্থীদের জন্য নিয়ে এসেছে বাস্তব ও মানসিক দু’ধরনের সংকট। সারাদেশের স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঘরোয়া পর্যায়ে ব্যাপক আচার-অনুষ্ঠান, পূজার আয়োজন, সাংস্কৃতিক কর্মসূচি ও স্বজনদের ব্যস্ততার দিনে শিক্ষার্থীদের একটি উচ্চঝুঁকির ভর্তি পরীক্ষা দিতে বাধ্য হওয়া অনেকের কাছে ধর্মীয় অধিকার ও শিক্ষাগত সুযোগের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় সংঘাত সৃষ্টি করছে।
বিভিন্ন হিন্দু শিক্ষার্থী সংগঠন ও অভিভাবকরা জানান, এদিন পরীক্ষা হলে তারা পূজার অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারবেন না। অনেকেই বাড়ি থেকে দূরে পরীক্ষা দিতে বাধ্য হবেন, বিশেষত বুয়েট ও রুয়েট কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীরা। শুধু পূজাস্থলে অনুপস্থিতির বিষয়ই নয়, ধর্মীয় পরিবেশ ও প্রস্তুতির ব্যাঘাত হওয়ায় পরীক্ষার মানসিক প্রস্তুতিও প্রভাবিত হতে পারে বলে তাদের আশঙ্কা।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, দেশের সর্ববৃহৎ প্রকৌশল ভর্তি পরীক্ষাগুলোর একটি এদিন নেওয়া হলে হাজারো পরীক্ষার্থীকে দ্বিধায় ফেলে দেওয়া হবে—ধর্মীয় দায়িত্ব পালন ও জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার মধ্যে নির্বাচন করতে বাধ্য করা ন্যায়ের পরিপন্থী। তাদের দাবি, দেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কমিটি ধর্মীয় উৎসবের দিনগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে পরীক্ষার সময়সূচি নির্ধারণ করে থাকে; রুয়েটের উচিত ছিল একই সংবেদনশীলতা প্রদর্শন করা।
অভিভাবকদের অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন—একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী কিছুদিন পিছিয়ে বা এগিয়ে পরীক্ষাটি আয়োজন করা কি সত্যিই অসম্ভব ছিল? পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে ইতোমধ্যে অনলাইনে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষজনের মাঝে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।
পরিস্থিতি বিবেচনায় হিন্দু শিক্ষার্থীরা দ্রুতই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার বা পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তনের প্রত্যাশা করছেন।