
পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তে নথিপত্রহীন বাংলাদেশিদের ভিড় :এসআইআরের আতঙ্কে দেশে ফিরতে চাইছেন বহু শ্রমিক, বিএসএফের হাতে আটক ৩০০
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
ভারতে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR – Special Intensive Revision) শুরু হওয়ার পর থেকেই সীমান্তবর্তী এলাকায় অস্বস্তি ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে অবৈধভাবে ভারতে বসবাসকারী নথিহীন বাংলাদেশিদের মধ্যে। এরই জেরে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাট মহকুমার স্বরূপনগর থানা এলাকার হাকিমপুর সীমান্তে বাংলাদেশে ফেরার চেষ্টা করার সময় প্রায় ৩০০ জনকে আটক করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী—বিএসএফ।
বিএসএফ সোমবার তথ্য নিশ্চিত করে জানায়—হাকিমপুর সীমান্তে জড়ো হওয়া এই বিপুল সংখ্যক মানুষের মধ্যে অনেকেই বছরের পর বছর ধরে কলকাতা, দিল্লি, বেঙ্গালুরু ও মুম্বাইয়ের বিভিন্ন জায়গায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করছিলেন। ভোটার তালিকা সংশোধনের নামে অবৈধ বাসিন্দাদের শনাক্তকরণের সরকারি উদ্যোগ শুরু হওয়ার পর থেকেই তারা গ্রেপ্তার আতঙ্কে সীমান্তমুখী হচ্ছেন।
তবে তাদের সবাই যে বাংলাদেশি—তা এখনও নিশ্চিত নয় বলে জানায় বিএসএফ। আটক ব্যক্তিদের পরিচয়, নথিপত্র ও নাগরিকত্ব যাচাইয়ের কাজ চলছে। সংগঠনটি জানায়, নথিপত্রহীনদের কেউ যদি স্বেচ্ছায় বাংলাদেশে ফিরে যেতে চান, তবে তা আইনগত প্রক্রিয়ায় করা হবে। মানবিক বিবেচনায় এখন পর্যন্ত কাউকেই গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি।
হাকিমপুর সীমান্তে আটকদের অনেকে জানিয়েছেন—ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে কম মজুরি, অনিশ্চিত জীবনযাপন ও পুলিশের নজরদারি বেড়ে যাওয়ায় তারা আর ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। বিশেষ করে এসআইআরের আওতায় অবৈধ থাকা ব্যক্তিদের নাগরিক তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় অনেকেই দ্রুত দেশে ফেরার চেষ্টা করছেন।
এদিকে বসিরহাট পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার হোসেন মেহেদি রহমান জানান, সীমান্ত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর কঠোর নজর রাখা হচ্ছে। বিএসএফ তাদের দায়িত্ব পালন করছে, পুলিশও সমন্বয় করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।
শুধু হাকিমপুর নয়, পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য সীমান্তঘেঁষা এলাকাতেও নথিপত্রহীন বাংলাদেশিদের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো। কয়েক দিনে জড়ো হওয়া লোকজনের সংখ্যা আরও বেড়ে চলেছে। শনাক্তকরণ পর্যায়ে এসে দেশে ফেরার আত্মসমর্পণমূলক প্রবণতা বাড়ায় সীমান্ত এলাকায় চাপ তৈরি হয়েছে।
ভারতের ১২টি রাজ্য ও তিন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে চলমান এসআইআর প্রক্রিয়ার লক্ষ্য—ভোটার তালিকা পরিশুদ্ধ করা এবং অবৈধ বসবাসকারীদের চিহ্নিত করা। তারই প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রধান এলাকাগুলোর ওপর।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিএসএফ, স্থানীয় প্রশাসন ও সীমান্তপুলিশ সক্রিয় রয়েছে।