ভূমিকম্পে উলুধ্বনি ও শঙ্খধ্বনি: সনাতনী সমাজে কেন এখনো জীবন্ত এই রীতি?

1 week ago
VIEWS: 1013

HindusNews ডেস্ক :

ভূমিকম্পের সময় সনাতনীদের উলুধ্বনি ও শঙ্খধ্বনি দেওয়ার দৃশ্য এখন আর নতুন নয়। সাম্প্রতিক কম্পনেও শহর থেকে গ্রাম—বহু জায়গায় মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে সমবেতভাবে এই ধ্বনি তুলতে দেখা যায়। কেউ কেউ এটাকে কুসংস্কার মনে করলেও, সমাজবিজ্ঞানী ও সংস্কৃতিবিদরা বলছেন—এই আচরণের পেছনে রয়েছে গভীর সাংস্কৃতিক ইতিহাস, মানসিক শক্তি, সামাজিক সংহতি এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের সমন্বয়।

হিন্দু সমাজে উলুধ্বনি ও শঙ্খধ্বনি বহু শতাব্দী ধরে শুভতা, শক্তি ও আশীর্বাদের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। পূজা-পার্বণে, বিবাহে, বিজয়োল্লাসে কিংবা যুদ্ধে উৎসাহ জোগাতে এই ধ্বনির ব্যবহার দেখা গেছে প্রাচীনকাল থেকে। তাই বিপদের মুহূর্তে সনাতনী পরিবারগুলোতে স্বভাবতই এই ধ্বনি উঠে আসে—যেন দেবতার প্রতি প্রার্থনা, রক্ষাকবচের আহ্বান কিংবা আশীর্বাদ চাওয়ার এক নিজস্ব পদ্ধতি।

মনোবিশ্লেষকদের মতে, ভূমিকম্পের মতো আকস্মিক দুর্যোগ মানুষের মধ্যে হঠাৎ আতঙ্ক সৃষ্টি করে। সেই ভয় কমাতে সমবেতভাবে একটি শক্তিশালী আওয়াজ মানুষের মনোবলে বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। উলুধ্বনি ও শঙ্খধ্বনি তাই শুধু ধর্মীয় বা ঐতিহ্যগত রীতি নয়—এটি মানসিকভাবে স্থিরতা আনার এক প্রাচীন সামাজিক প্রতিক্রিয়া। সমবেত শব্দে মানুষ বুঝতে পারে—“আমি একা নই, সবাই একসঙ্গে আছি”—এই অনুভূতিই আতঙ্ককে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করে।

একসময় যখন সাইরেন বা লাউডস্পিকার সাধারণ ছিল না, তখন বড় কোনো বিপদের সময় মানুষ শঙ্খ বাজিয়ে বা উলুধ্বনি দিয়ে আশপাশের মানুষকে সতর্ক করত। শঙ্খের তীব্র আওয়াজ দূর পর্যন্ত শোনা যায় বলে এটি প্রাকৃতিক সংকেতের মতোই কাজ করত। যদিও এখন প্রযুক্তি এসেছে, তবুও বহু অঞ্চলে সেই ঐতিহ্য এখনো অটুট।

পুরাণে শঙ্খধ্বনিকে অশুভ শক্তি ভয়ে দূরে থাকার প্রতীক বলা হয়েছে। যদিও বৈজ্ঞানিকভাবে এ ধ্বনি ভূমিকম্পকে প্রভাবিত করতে পারে না, তবুও ধর্মীয় বিশ্বাস ও আচারগত শক্তি মানুষের মনে সাহস জোগায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন—বিপদের মুহূর্তে যে কোনো বিশ্বাসই মানুষের শক্তি হয়ে দাঁড়াতে পারে, এবং সেই শক্তিই তাকে শান্ত থাকতে সাহায্য করে।

বিজ্ঞান বলছে—মানুষের কোনো শব্দ ভূগর্ভস্থ প্লেট টেকটোনিকের নড়াচড়াকে প্রভাবিত করতে পারে না, তাই উলুধ্বনি বা শঙ্খধ্বনি ভূমিকম্প থামায় না। কিন্তু মানুষের ঐতিহ্য মানসিকতায় গভীরভাবে প্রোথিত—এটি সামাজিক সংযোগ, ঐতিহ্য, সাহস, প্রার্থনা ও সম্মিলিত শক্তির প্রকাশ।

সামগ্রিকভাবে দেখা যায়, ভূমিকম্পের সময় সনাতনীদের উলুধ্বনি বা শঙ্খধ্বনি দেওয়া শুধু বিশ্বাসের নয়—এটি একটি সাংস্কৃতিক প্রতিক্রিয়া, মানসিক শক্তির উৎস, আর বিপদের মুহূর্তে একতার প্রতীক।

to join the global Sanatani Hindu Community
Connect with Sanatani Hindus from all over the world — share, learn, and grow together.
Explore Questions, Bhajan Lyrics, Leelas, Feeds, Business Pages, Products, plus Shlokas, Events, Courses, Jobs, Marriage, Help Posts, and more.
মন্তব্য করতে Login অথবা Registration করুন