
সেজে উঠছে অযোধ্যা! রাম মন্দিরের ১৯১ ফুট চূড়ায় পতাকা উত্তোলন করবেন প্রধানমন্ত্রী মোদী — যোগীর নেতৃত্বে চলছে দফায় দফায় মহাপরিকল্পনার প্রস্তুতি
HindusNews ডেস্ক:(অযোধ্যা)
অযোধ্যায় আবারও লেখা হতে চলেছে এক ঐতিহাসিক অধ্যায়। আগামী ২৫ নভেম্বর নবনির্মিত রাম মন্দিরের ১৯১ ফুট উচ্চ চূড়ায় প্রথমবারের মতো পতাকা উত্তোলন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই মুহূর্তটিকে ঘিরে অযোধ্যাজুড়ে এখন উৎসবের আবহ, শহরের প্রতিটি মোড় থেকে মন্দির চত্বরে পৌঁছানো পর্যন্ত সব জায়গায় আলো, রং এবং আধ্যাত্মিক আবেগের এক বিশাল তরঙ্গ সৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার শুভ ‘কলশ যাত্রা’র মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে এই বিশেষ অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ নিজেই গোটা আয়োজনের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন এবং তাঁর নেতৃত্বে শহরে চলছে সৌন্দর্যায়ন, নিরাপত্তা এবং সাংস্কৃতিক প্রদর্শনীর সুচারু সমন্বয়।
রাম মন্দির নির্মাণের পর অযোধ্যার পরিচিতি পাল্টে হয়েছে আমূলভাবে। আগে শুধুই তীর্থভ্রমণের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত হলেও এখন এটি দেশের অন্যতম শক্তিশালী পর্যটন শহরে পরিণত হয়েছে। ২০২০ সালে যেখানে পর্যটকের সংখ্যা ছিল মাত্র ৬০ লাখের মতো, সেখানে ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন—মাত্র ছয় মাসেই পৌঁছে গেছে প্রায় ২,৩০০ লাখে। প্রশাসনের ধারণা, এই সংখ্যা বছরের শেষে ৫০০ কোটিরও বেশি ছুঁতে পারে। এই বিপুল দর্শনার্থীর আগমন অযোধ্যার অর্থনীতি, সংস্কৃতি এবং আন্তর্জাতিক পরিচিতিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
২০১৭ সালে যোগী আদিত্যনাথ উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই অযোধ্যার উন্নয়নে এসেছে ব্যাপক গতি। পূর্ববর্তী সরকারগুলোর সময় যেখানে বহু প্রকল্প থমকে ছিল, সেখানে যোগী সরকারের সময়ে দীপাবলির দীপোৎসব আন্তর্জাতিক মঞ্চে অযোধ্যাকে নতুন স্বীকৃতি দিয়েছে। ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে ২০৩১ সালে অযোধ্যাকে একটি হাই-টেক শহরে রূপান্তরের মাস্টারপ্ল্যান। পাশাপাশি ২০৪৭ সালের মধ্যে অযোধ্যাকে বিশ্বের শীর্ষ আধ্যাত্মিক কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যেও চলছে দ্রুত কাজ।
এই পরিকল্পনার আওতায় অযোধ্যায় গড়ে উঠছে আধুনিকতা ও আধ্যাত্মিকতার মিলিত অবকাঠামো। শহরে তৈরি হচ্ছে উন্নত আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা কেন্দ্র, বিলাসবহুল আবাসন, নদীপথে রিভার ক্রুজ, জলবিনোদন, দর্শনার্থীদের জন্য হেলিকপ্টার জয়রাইড, এবং আধুনিক বৈদিক ও যোগ প্রশিক্ষণের কেন্দ্র। ক্রমবর্ধমান পর্যটন চাহিদা সামলাতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার মিলে প্রায় ৫,০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। অনুমান করা হচ্ছে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই উত্তরপ্রদেশের পর্যটন শিল্প ৭০,০০০ কোটি টাকার বিশাল বাজারে পরিণত হবে, যার এক-চতুর্থাংশ আসবে অযোধ্যা থেকেই। বর্তমানে রাজ্যের জিএসডিপিতে অযোধ্যার অবদান প্রায় ১.৫ শতাংশ, যা উত্তরপ্রদেশকে এক ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির পথে এগিয়ে নিচ্ছে।
এদিকে, বিশাল ভিড় ও ভবিষ্যৎ জনসংখ্যাকে মাথায় রেখে ১,৪০৭ একর জমিতে তৈরি হচ্ছে একটি পরিবেশবান্ধব স্মার্ট টাউনশিপ। এর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ২,১৮২ কোটি টাকা। একইসঙ্গে ‘রাম বন গমন পথ’ নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৪,৪০৩ কোটি টাকা। ২০৪৭ সালের মধ্যে অযোধ্যার জনসংখ্যা ৩৪ লাখে পৌঁছবে বলে প্রশাসনের ধারণা, আর সেই হিসেবেই দ্রুত এগোচ্ছে নগর পরিকল্পনার কাজ।
২৫ নভেম্বরের পতাকা উত্তোলন শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়—এটি অযোধ্যার নতুন যাত্রার প্রতীক। আধ্যাত্মিক শক্তি, উন্নয়ন এবং পর্যটনের মিলনে এই শহর যে ভারতের একটি বৈশ্বিক পরিচয় হয়ে উঠছে, এই অনুষ্ঠান সেই পরিচয়কে আরও দৃঢ় করবে বলে মনে করছে স্থানীয় মানুষ থেকে প্রশাসন—সবাই। অযোধ্যা আজ প্রস্তুত ইতিহাসের আরেকটি স্বর্ণলিপি লেখার জন্য।