
বিয়ের আড়াই সপ্তাহ আগে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ উর্মি সাহা : দুই পরিবারে শোকের ছায়া, থানায় জিডি করেও মিলছে না সন্ধান
HindusNews ডেস্ক :
ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী উর্মি সাহা। ঠিক ২৬ নভেম্বর তাঁর বিয়ের দিন ঠিক ছিল। দীর্ঘদিনের সম্পর্কে থাকা ছেলেটির সঙ্গে দুই পরিবার সম্মত হয় অনেকটা মেয়েটির জোরালো ইচ্ছার পর। বিয়ে ঘিরে নতুন জীবনের আনন্দে উর্মি যেন আরও খুশি, আরও উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠছিলেন। নিজের বিয়ের প্রতিটি প্রস্তুতি তিনি নিজেই করছিলেন। হলুদ সন্ধ্যার পরিকল্পনা থেকে শুরু করে ফটোগ্রাফার হায়ার, নিমন্ত্রণ কার্ড ছাপানো, বাজেট তৈরি—সবই তাঁর নিজের হাতের কাজ। এমনকি কার্ড ছাপিয়ে নিজেই হাসিমুখে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের হাতে তুলে দিচ্ছিলেন। তাঁকে দেখে কারও মনেই সন্দেহ জাগার মতো কোনো আচরণ ছিল না।
কিন্তু এই স্বাভাবিকতার আড়ালেই লুকানো ছিল এক চরম অস্থিরতা, যার কোনো ইঙ্গিত কেউই পাননি। ১৬ নভেম্বর রবিবার সকালে ময়মনসিংহের গুলকিবাড়ি জামে মসজিদ সংলগ্ন আতিক হোস্টেল থেকে বের হয়ে যান উর্মি। এরপর থেকে তিনি আর ফেরেননি। তাঁর ফোন বন্ধ, কোনো যোগাযোগ নেই, কোনো সূত্র নেই—হঠাৎ যেন পৃথিবী থেকে মিলিয়ে গেছেন। পরিবার, বন্ধু, সহপাঠী—সবার একটি প্রশ্নই ঘুরে ফিরে আসছে: “এমন কেন হলো?”
উর্মি সাহার পরিবার জামালপুরের বক্সীগঞ্জ বাজারে। বাবা উত্তম কুমার সাহা স্থানীয় একটি পেট্রোল পাম্পের ম্যানেজার, মা মনি সাহা গৃহিণী। তাঁদের একমাত্র সন্তান উর্মি—তাই এই নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা বাবা-মায়ের জন্য যেন মৃত্যুর মতোই ভয়াবহ। বিয়ের প্রস্তুতি নিয়ে যিনি গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ব্যস্ত ছিলেন, যিনি নিজ হাতে সাজাচ্ছিলেন জীবনের নতুন অধ্যায়—হঠাৎ তিনি কেন উধাও হয়ে যাবেন? পরিবার বলছে, যদি তিনি স্বেচ্ছায় কখনো চলে যেতে চাইতেন, তাহলে তাঁর হাতে তো ছিল অসংখ্য সুযোগ। তাহলে বিয়ের এত আয়োজন, নিজের টাকা খরচ, হাসিমুখে আত্মীয়দের নিমন্ত্রণ—সবই কি অভিনয় ছিল? নাকি ঘটনার ভেতরে লুকানো আছে আরও গভীর কোনো রহস্য?
কিছু অনিশ্চিত তথ্য থেকে জানা গেছে—সম্ভবত উর্মি “একজন বিধর্মীর সাথে পালিয়ে গেছেন”, কিন্তু পুলিশ বা পরিবার এখন পর্যন্ত এর কোনো প্রমাণ পায়নি। পরিবার এটাকে গুজব হিসেবেই দেখছে। তাদের বিশ্বাস—বিয়ের এত আনন্দ, এত স্বতঃস্ফূর্ত প্রস্তুতি, নিজের হাতের কাজ—এসবের পেছনে কোনো ভণিতা থাকে না। উর্মির শেষ লোকেশন ট্র্যাক করে উত্তরা এলাকার একটি সম্ভাব্য অবস্থান পাওয়া গেছে, তবে সেখান থেকেও স্পষ্ট তথ্য মেলেনি। ময়মনসিংহ থানায় করা জিডির কপি উত্তরা থানায় জমা দেওয়া হলেও এখনো উদ্ধার কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি।
উর্মির বাবা উত্তম সাহার কণ্ঠে এখন শুধু অসহায়তা। তিনি বলেন, “আমার মেয়েটা বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে—আমি জানি না। শুধু একবার তাকে দেখতে চাই। সে ভালো আছে এইটুকুই জানতে চাই।” একমাত্র সন্তানের এই রহস্যজনক অন্তর্ধানে পুরো পরিবার ভেঙে পড়েছে।
উচ্চতায় পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চি, সুগঠিত দেহের অধিকারী ফর্সা রঙের এই মেয়েটি এখন কোথায়—তা কেউ বলতে পারছে না। হোস্টেল থেকে ঠিক কী উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলেন, তাঁকে কেউ কি নিয়ে গেছে, নাকি স্বেচ্ছায় কোথাও গিয়েছেন—প্রশ্নগুলোর উত্তর মিলছে না কোথাও। দিন যত যাচ্ছে, পরিবার আর স্বজনদের উদ্বেগ তত বাড়ছে।
যদি কারও কাছে উর্মি সাহা সম্পর্কে কোনো তথ্য থাকে, তাঁর পরিবার অনুরোধ করেছে যেন দ্রুত নিকটস্থ থানায় অথবা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। নিখোঁজের পর কেটে গেছে একাধিক দিন—তবুও আশার প্রদীপ নিভে যায়নি। উর্মির পরিবার আজও অপেক্ষায়—তাদের মেয়েটা একদিন ফিরে আসবে এই বিশ্বাস নিয়ে।