
মানিকগঞ্জে বাউলশিল্পী আবুল সরকারের সমর্থকের ওপর তৌহিদী জনতার হামলা ! আহত ৩
HindusNews ডেস্ক :
ধর্ম অবমাননার অভিযোগে বাউলশিল্পী আবুল সরকারের গ্রেপ্তারের পর থেকে মানিকগঞ্জজুড়ে বাড়তে থাকা উত্তেজনা রোববার আরও তীব্র রূপ নেয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মানিকগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের (বিজয় মেলা মাঠ) পাশে তৌহিদী জনতার একটি অংশ বাউল শিল্পী আবুল সরকারের সমর্থকদের ওপর হামলা চালায়। এতে তিনজন গুরুতর আহত হন বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে।
আহত তিনজন হলেন—শিবালয় উপজেলার সাঁকরাইল গ্রামের বাউল আবদুল আলিম, হরিরামপুরের ঝিটকা এলাকার জহুরুল ইসলাম এবং সিংগাইরের তালেবপুর এলাকার আরিফুল ইসলাম। আহত তিনজনকে দ্রুত উদ্ধার করে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “তৌহিদী জনতার একাংশের হামলায় বাউল শিল্পী আবুল সরকারের তিন সমর্থক আহত হয়েছেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে ছিল, তাই দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।”
এর আগে বৃহস্পতিবার মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার এক গানের আসরে ‘ইসলাম ধর্ম ও আল্লাহকে নিয়ে কটূক্তি’র অভিযোগ তুলে গোয়েন্দা পুলিশ বাউল শিল্পী আবুল সরকারকে আটক করে। পরদিন আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়। আবুল সরকার সাটুরিয়া উপজেলার তিল্লী ইউনিয়নের পারতিল্লী এলাকার বাসিন্দা এবং স্থানীয়ভাবে ‘ছোট আবুল সরকার’ নামে পরিচিত।
রোববার শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় তৌহিদী জনতা ও আলেম-ওলামারা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ আয়োজন করে। একই সময়ে আবুল সরকারের ভক্ত-অনুরাগীরা মানববন্ধনের ঘোষণা দেয়। দু’পক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বাড়তে থাকায় প্রশাসন আগে থেকেই আলাদা সময় বেঁধে দেয়। সকাল ৯টায় তৌহিদী জনতার মিছিল বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু হয়ে জেলা ডাকঘরের সামনে সমাবেশে মিলিত হয়। সমাবেশ শেষে মিছিলের একটি অংশ বিচ্ছিন্নভাবে বাউল ভক্তদের ওপর হামলা চালায়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, বাউল ভক্তদের মানববন্ধন শুরু হওয়ার আগেই তৌহিদী জনতার কিছু সদস্য তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। মুহূর্তেই পরিস্থিতি বিশৃঙ্খল হয়ে ওঠে এবং চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আল মামুন আরও জানান, হামলার সময় তৌহিদী জনতার পক্ষের মাওলানা আব্দুল আলীম নামের এক মাদ্রাসা শিক্ষকও আহত হন। তিনি ঘিওর উপজেলার শৈলকড়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ বলে জানা গেছে। তাকেও সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থলের পাশেই পূর্বনির্ধারিতভাবে পুলিশ মোতায়েন ছিল। বিক্ষোভ শেষে বিচ্ছিন্নভাবে সংঘটিত হামলা দ্রুত থামিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা সম্ভব হয়। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।
মানিকগঞ্জজুড়ে বর্তমানে অতিরিক্ত নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন উত্তেজনা প্রশমনের জন্য উভয় পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।