
বাউলসাধকদের নিয়ে ঢাকায় মহাসম্মেলনের ডাক দিলেন ফরহাদ মজহার
HindusNews ডেস্ক :
মানিকগঞ্জে বাউল সাধকদের ওপর সাম্প্রতিক হামলার প্রতিবাদে ঢাকায় বৃহৎ মহাসম্মেলনের ঘোষণা দিয়েছেন প্রখ্যাত কবি, চিন্তক ও মানবাধিকারকর্মী ফরহাদ মজহার। সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সাধুগুরু ভক্ত ও ওলি-আওলিয়া আশেকান পরিষদ আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এই ঘোষণা দেন। সমাবেশে বাউল, ফকির, সুফি-সাধকসহ বিভিন্ন আধ্যাত্মিক ধারার অনুসারীরা উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ফরহাদ মজহার। তিনি জানান, দ্রুতই রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে দুই থেকে তিন দিনব্যাপী একটি মহাসম্মেলন আয়োজন করা হবে, যেখানে বাউল–ফকিরদের আধ্যাত্মিক গান, দর্শন ও মতাদর্শের আলোচনার মাধ্যমে বাউলদের বিরুদ্ধে ছড়ানো বিভ্রান্তি দূর করা হবে। তার ঘোষণা অনুযায়ী, মানিকগঞ্জেও আরেকটি বৃহৎ সমাবেশ আয়োজন করা হবে, যেখানে স্থানীয় বাউল–ফকিরদের হামলার প্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হবে।
মানিকগঞ্জে বাউল আবুল সরকারের ওপর হামলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যদি কোনো রাজনৈতিক দল দোষীদের আড়াল করতে চায়, তবে জনগণই ব্যালটে তার উপযুক্ত জবাব দেবে। তিনি বাউল, ফকির ও সুফি ধারার অনুসারীদের শান্তিপূর্ণভাবে একত্র থাকার আহ্বান জানান। তিনি অভিযোগ করেন যে, জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার ব্যক্তি স্বাধীনতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তার দাবি—একটি লুটেরা-মাফিয়া গোষ্ঠী নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণে নিতে চাইছে, যারা দেশজ সংস্কৃতি, মাজার এবং বাউল ঐতিহ্যের ওপর হামলার মাধ্যমে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে।
ফরহাদ মজহার আবুল সরকারের পালাগান পরিবেশনাকে সৃজনশীল শিল্পরূপ বলে উল্লেখ করে বলেন যে, তিনি কোনো ভুল করেননি। বরং প্রশাসনের সাংস্কৃতিক জ্ঞানের অভাবের কারণেই শিল্পীর কণ্ঠনাট্যকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সমাবেশে উপস্থিত বাউল অনুসারীরাও দাবি করেন, আবুল সরকারের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাদের অভিযোগ—কিছু শিক্ষাহীন ও অসৎ উদ্দেশ্যসম্পন্ন মহল তার পরিবেশনার একটি অংশকে বিচ্ছিন্নভাবে প্রচার করে তাকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে, যা বাউল–সুফি ঐতিহ্যের সঙ্গে কোনোভাবেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
বাউল–ফকিরদের আশঙ্কা, একটি গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে এই ঘটনার সুযোগ নিয়ে সমাজে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ও অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চায়। এ অবস্থায় রাষ্ট্রের কার্যকর ভূমিকা জরুরি বলে তারা মনে করেন। সমাবেশ শেষে বাউলসাধকদের পক্ষে কবি ফরহাদ মজহার, মোহাম্মদ রোমেল, আবুল কাশেম ও আলেয়া বেগম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি স্মারকলিপি জমা দেন। স্মারকলিপিতে চারটি দাবি তুলে ধরা হয়—বাউল আবুল সরকারের অবিলম্বে ও নিঃশর্ত মুক্তি, মানিকগঞ্জে তার ভক্তদের ওপর হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার, সামাজিক নৈরাজ্য প্রতিরোধে রাষ্ট্রের দৃশ্যমান পদক্ষেপ এবং দেশজ ঐতিহ্যের অংশ বিভিন্ন মাজারে হামলা প্রতিরোধ।