
জকসুর ভিপি পদে লড়ছেন ৩ সনাতনী শিক্ষার্থী
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি :
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনে ভিপি (সহ-সভাপতি) পদে এবারের প্রতিদ্বন্দ্বিতা জমে উঠেছে তিন সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীকে ঘিরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এ ধরনের প্রতিযোগিতা বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে বলে মনে করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
তিন প্রার্থীর মধ্যে দু’জন স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে লড়ছেন, আর একজন অংশ নিচ্ছেন বাম সমর্থিত ‘মওলানা ভাসানী ব্রিগেড’ প্যানেলের হয়ে। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা হলেন অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের ২০২১–২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী চন্দন কুমার দাস এবং সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের ২০২৩–২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মিঠুন চন্দ্র রায়। অপরদিকে সংগীত বিভাগের ২০১৯–২০ সেশনের শিক্ষার্থী গৌরব ভৌমিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মওলানা ভাসানী ব্রিগেডের প্রার্থী হিসেবে।
নিজ নিজ অবস্থান থেকে তিনজনই সবার ধর্মীয় স্বাধীনতা, সংস্কৃতি চর্চা এবং ক্যাম্পাসে নিরাপদ ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরির প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। বিশেষত সনাতনী শিক্ষার্থীদের জন্য উপাসনালয় স্থাপনের দাবি এবার নির্বাচনী ইস্যুতে রূপ নিয়েছে। চন্দন কুমার দাস ও মিঠুন রায় দু’জনই জানিয়েছেন—বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে সনাতনী শিক্ষার্থীদের নিজস্ব উপাসনালয় না থাকায় নানা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে তারা ভোগান্তির শিকার হন। নির্বাচিত হলে এই সমস্যা সমাধানে তারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করবেন।
জকসুর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা অনুযায়ী, মোট ১৬ হাজার ৩৬৫ শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ২ হাজার সনাতনী ভোটার রয়েছেন। শিক্ষার্থীদের ধারণা—এই সনাতনী ভোটাররাই শেষ পর্যন্ত ফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন।
এদিকে মনোনয়ন দাখিলের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বুলিং ও নেতিবাচক মন্তব্যের শিকার হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী চন্দন কুমার দাস। গত মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টায় দেওয়া এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন,
“মনোনয়ন তোলার সঙ্গে সঙ্গে একটি গোষ্ঠী আমাকে সংখ্যালঘু হিসেবে ট্রিট করছে। তাদের একটাই উদ্দেশ্য—আমাকে জোর করে একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত দেখানো। আপনাদের এ ধরনের মানসিকতার প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করছি।”
জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করে চন্দন বলেন,
“সৃষ্টিকর্তা সহায়, আমি বিশ্বাস করি শিক্ষার্থীরা আমাকে সমর্থন দেবেন। ২০ বছর ধরে ক্যাম্পাসে সনাতনী শিক্ষার্থীদের প্রার্থনার কোনো নির্দিষ্ট স্থান নেই। আমি ভিপি নির্বাচিত হলে সবার আগে ক্যাম্পাসে মন্দির নির্মাণ করব। শুধু সনাতনীদের জন্য নয়, অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের জন্যও প্রার্থনার আলাদা স্থান নিশ্চিত করব।”
এছাড়া তিনি জানান—আবাসন ও পরিবহন সংকট নিরসন, হলের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, সেশনজট দূরীকরণ, গবেষণাগার ও ক্লাসরুম আধুনিকায়ন, ক্যাম্পাস নিরাপত্তা জোরদার এবং নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরিতেও তিনি অগ্রাধিকার দেবেন।
জকসুর ভিপি পদে এবারকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুধু শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়াকেই নতুনভাবে আলোচনায় আনছে না, পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদের প্রশ্নকেও সামনে নিয়ে এসেছে বলে পর্যবেক্ষকদের বিশ্লেষণ।