
রাজারহাটে মাছ ব্যবসায়ীর সারা জীবনের সঞ্চয় ও ঋণমুক্তির স্বপ্ন এক রাতেই পুড়ে ছাই!
রতন রায় ▪ রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি :
রাজারহাটের নাজিমখাঁন ইউনিয়নের রায় পাড়া গ্রামে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে জীবনের জমাট বাঁধা স্বপ্ন মুহূর্তেই হারিয়ে ফেলেছেন মাছ ব্যবসায়ী গোবিন্দ চন্দ্র রায়। তিলে তিলে গড়ে তোলা সংসারের ভরসা, বহু বছরের পরিশ্রমে জমানো সঞ্চয়, ব্যবসা ও জমিজমার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র—সবই এক রাতের আগুনে ভস্মীভূত হয়ে গেছে। ঋণমুক্ত হয়ে একটু স্বস্তির জীবন কাটানোর যে স্বপ্ন তিনি বুকে লালন করেছিলেন, সেই পথচলাও থেমে গেল অগ্নিকাণ্ডের কালো ধোঁয়ায়।
গত ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যা সাতটার দিকে গোবিন্দ চন্দ্র রায়ের বসতঘরে এই আগুন লাগে। পরিবারের সবাই তখন পাশের একটি বাড়িতে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে ঘর তালাবদ্ধ করে রেখেছিলেন। জানালা খোলা থাকলেও ঘরে আগুন লাগার কোনো স্পষ্ট কারণ জানা যায়নি। স্থানীয়রা আগুন দেখে ছুটে এসে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলেও ততক্ষণে ঘরের ভেতরের সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আগুন নেভানোর পর দেখা যায়, চারদিকে ছড়িয়ে আছে পোড়া কাঠ, ধ্বংসস্তুপ, আসবাবের পাঁজর আর ছাই হয়ে যাওয়া সেই স্বপ্নগুলোর নিঃশব্দ নিদর্শন।
সব হারানো গোবিন্দ চন্দ্র রায়ের চোখেমুখে এখন হতাশার ছাপ স্পষ্ট। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, “জীবনে একটু ঋণমুক্ত হওয়ার স্বপ্ন ছিল। সংসার চালিয়ে, কম খেয়ে, কষ্ট করে এক লাখ টাকা জমানো হয়েছিল। ভেবেছিলাম ঋণ শোধ করে শান্তিতে বাঁচব। কিন্তু এক রাতেই সব শেষ হয়ে গেল। এখন কিভাবে আবার শুরু করব—কিছুই বুঝতে পারছি না।” তিনি আরও জানান, ঘর তালাবদ্ধ থাকলেও জানালা খোলা ছিল। আগুন কীভাবে লাগল, তারা কেউই তা বুঝে উঠতে পারছেন না। এটি নিছক দুর্ঘটনা, নাকি কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড—সেই প্রশ্ন এখনও ঘুরপাক খাচ্ছে তার মনে।
স্থানীয়রা এই ঘটনাকে মানবিক বিপর্যয় হিসেবে দেখছেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। গ্রামবাসী থেকে শুরু করে এলাকার সাধারণ মানুষ সবাই চান, প্রশাসন দ্রুত সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসুক। এক অসহায়, পরিশ্রমী মানুষের পুনরায় ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মানবিক সহায়তা, সমর্থন ও আশ্বাস।
এক রাতের অগ্নিকাণ্ড গোবিন্দ চন্দ্র রায়ের স্বপ্ন কেড়ে নিলেও তিনি এখনও আশা করছেন, সমাজের মানুষ এগিয়ে এলে আবার নতুন করে জীবন শুরু করা সম্ভব হবে। মানবতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য এটি আরও একবার সময়ের তাগিদ স্মরণ করিয়ে দিল।