
শাস্ত্রীয় উপকথায় কর্মফলের শিক্ষা : গান্ধারীর প্রশ্নে শ্রীকৃষ্ণের উত্তর আলোচনায়
ধর্ম ডেস্ক:
অনেকে প্রশ্ন তোলেন—“এই জন্মে তো কোনো পাপ করিনি, তাহলে এত যন্ত্রণা কেন সহ্য করতে হচ্ছে?”—এ প্রশ্নেরই প্রতীকী উত্তর হিসেবে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে মহাভারতের যুদ্ধোত্তর একটি উপকথা, যেখানে গান্ধারী ও শ্রীকৃষ্ণের সংলাপের মাধ্যমে কর্মফলের গভীর দর্শন তুলে ধরা হয়েছে।
মহাভারতের যুদ্ধ শেষে পুত্রশোকে ভেঙে পড়া গান্ধারী ক্রোধে শ্রীকৃষ্ণকে অভিশাপ দেন—তিনি যেমন সন্তান হারানোর দুঃখে আজ নিঃস্ব, তেমনি কৃষ্ণও ভবিষ্যতে একাকী মৃত্যুর মুখোমুখি হবেন। অভিশাপ উচ্চারণের পরই অনুতপ্ত গান্ধারী জানতে চান—“আমি তো এই জীবনে কোনো পাপ করিনি, তাহলে এমন নরক যন্ত্রণা কেন?”
উপকথা অনুযায়ী শ্রীকৃষ্ণ উত্তর দেন—কর্মের ফল কখনও তাৎক্ষণিক, কখনও বহু জন্ম পরে ফিরে আসে।
তিনি গান্ধারীকে জানান, একশো জন্ম পূর্বে কৈশোরে ১০০ প্রজাপতি ধরে তাদের চোখে ঘাসের শীষ গেঁথে মালা বানানোর পাপ কর্মের ফলেই তিনি পেয়েছেন অন্ধ স্বামী এবং চোখ থাকতেও অন্ধ সেজে থাকার জীবন। সেই ১০০ প্রজাপতি নৃশংস মৃত্যুর প্রতিক্রিয়াতেই তাঁর বর্তমান জীবনের ১০০ সন্তান জন্ম নিয়ে আবার মৃত্যুবরণ করেছে—ফলে তিনি সন্তানহানির অসহনীয় বেদনায় দগ্ধ হয়েছেন।
একইভাবে ধৃতরাষ্ট্রও জানতে চান তার জন্মান্ধতা ও শত পুত্রহানির পেছনের কারণ। উপকথা বর্ণনা করে—১০০ জন্ম আগে তিনি এক বর্ষার রাতে ক্ষুধার্ত অবস্থায় এক শুকপাখি দম্পতি ও তাদের ১০০ ছানাকে হত্যা করেছিলেন। সেই পাপের ফলই বহু জন্ম পরে ফিরে এসেছে—তিনি জন্মান্ধ হয়েছেন এবং সেই পাখি-সন্তানেরাই মানুষেরূপে জন্ম নিয়ে কুরুক্ষেত্রে মৃত্যুবরণ করেছেন।
উপকথায় শ্রীকৃষ্ণের ভাষ্য—
“পুণ্য কর্মের ফল ভোগ শেষ হলে পাপ কর্মের ফলও ভোগ করতে হয়।
নিয়তি এই কর্মফলকেই বাস্তবে প্রতিফলিত করে। এতে ঈশ্বর অন্যায় করেন না—প্রতিজন নিজের কর্মের ফলই পান।”