
গৌরনদীতে দেড়শ বছরের ঐতিহ্যবাহী দুর্গা মন্দির ভাঙচুর করে জমি দখলের অভিযোগ
HindusNews ডেস্ক :
বরিশাল জেলার গৌরনদী পৌরসভার সুন্দরদী মহল্লায় দেড়শ বছরের ঐতিহ্যবাহী একটি দুর্গা মন্দির ভেঙে গুড়িয়ে জোরপূর্বক জমি দখল করার অভিযোগ উঠেছে একই এলাকার রিপন মিত্র ও সুমন মিত্রের বিরুদ্ধে। প্রকাশ্যে একটি ধর্মীয় স্থাপনা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটলেও প্রভাবশালী প্রতিপক্ষের ভয়ে দীর্ঘদিন আতঙ্কে ছিলেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।
ঘটনাটি ঘটেছে গত ১৯ নভেম্বর বুধবার সকালে। কিন্তু ভয় ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে সঙ্গে সঙ্গে অভিযোগ জানাতে পারেননি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার। প্রায় এক সপ্তাহ পর ২৪ নভেম্বর সোমবার সকালে জমির মালিক নারায়ণ মিত্র গৌরনদী মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তবে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের অভিযোগ—এটি কেবল জমি বিরোধ নয়; বরং একটি ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি নির্মম অবমাননা।
নারায়ণ মিত্র জানান, তিনি তার বড়ভাই বজ্রবিলাস মিত্রের কাছ থেকে ১৯৮৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি সুন্দরদী মৌজার ১০ শতাংশ জমি দলিলমূলে কেনেন। এই সম্পত্তির অংশ হিসেবেই ছিল প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো ‘সুন্দরদী মিত্র বাড়ি দুর্গা মন্দির’। বহু প্রজন্ম ধরে এই মন্দিরে নিয়মিত দুর্গাপূজা, হোমযজ্ঞসহ নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। সরকারি প্রণোদনা তালিকাভুক্ত হওয়ায় এটি একটি নিয়মিত পরিচালনা কমিটির অধীনেও ছিল।
অভিযোগ সম্পর্কে নারায়ণ মিত্র বলেন, “১৯ নভেম্বর সকালে রিপন মিত্র ও সুমন মিত্র লোকজন নিয়ে পরিকল্পিতভাবে দলবলসহ আসে এবং পুরো মন্দিরটি ভেঙে গুড়িয়ে ফেলে। আমরা ভয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে ছিলাম। প্রতিরোধ করার মতো পরিস্থিতি ছিল না।”
তার ছেলে নন্দ মিত্র বলেন, “মন্দিরটি আমাদের পূর্বপুরুষদের সময়ের। বহু প্রজন্ম ধরে এটি আমাদের ধর্মীয় কেন্দ্র। তারা শুধু মন্দির ভাঙেনি—রাতের অন্ধকারে প্রতিমা, পূজার সামগ্রী, দানবাক্স, অসংখ্য মালামাল সরিয়ে ফেলেছে। কিছু আবার বিক্রি করে দিয়েছে। এটি শুধু জমি দখল নয়, আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাসে সরাসরি আঘাত।”
অভিযুক্ত রিপন মিত্র ও সুমন মিত্র অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমরা কোনো মন্দির ভাঙিনি। বিষয়টি জমি সংক্রান্ত পারিবারিক বিরোধ।” তবে তারা বিস্তারিত কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ঐতিহ্যবাহী এই দুর্গা মন্দির এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের একমাত্র কেন্দ্র ছিল। মন্দির ভাঙচুরের ঘটনায় এলাকাজুড়ে হতাশা ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।
গৌরনদী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইব্রাহীম বলেন, ‘বিষয়টি যেহেতু জমিজমা সংক্রান্ত এবং দুই পক্ষই জমি নিজের বলে দাবি করছেন। তাই উভয় পক্ষকে কাগজপত্র নিয়ে দেওয়ানি আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে।’